ঢাকায় অপরাধী দ্রুত শনাক্তে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভাঙা সিসি ক্যামেরা
খুন, ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এখন প্রথমেই যে কাজ করে, সেটি হলো ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা। এরপর সেই ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করার চেষ্টা চলে। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরা ভাঙা থাকার কারণে অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছে পুলিশ।
শুধু অপরাধী শনাক্ত করার ক্ষেত্রেই নয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরার কার্যকারিতা রয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, অপরাধ সংঘটনের আগে সাধারণত সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে অপরাধীরা। এর অন্যতম কারণ প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে যাতে দ্রুত অপরাধীকে শনাক্ত করা না যায়। একই সঙ্গে অপরাধের ঘটনার কোনো ভিডিও ফুটেজ যাতে কারও কাছে না থাকে। এখন রাজধানীতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত ও কার্যকর সিসি ক্যামেরা না থাকার বিষয়টি অন্যতম।
শুধু অপরাধী শনাক্ত করার ক্ষেত্রেই নয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরার কার্যকারিতা রয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, অপরাধ সংঘটনের আগে সাধারণত সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে অপরাধীরা।
গত জুলাই ও আগস্টের শুরুতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সিসি ক্যামেরা নষ্ট করেছে দুর্বৃত্তরা। উদাহরণ হিসেবে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার কথা বলা যায়। সেখানকার বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা ভাঙা।
মোহাম্মদপুর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে; কিন্তু অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছে সিসি ক্যামেরা না থাকায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপর মোহাম্মদপুর ও আশপাশ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করেছে।
মোহাম্মদপুর এলাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও অঞ্চলের অধীন। এই অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, মোহাম্মদপুরের অনেক স্থানে এখন সিসি ক্যামেরা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে অপরাধী শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
অপরাধীর গতিবিধি লক্ষ করা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ডিএমপির পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। গত বছর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ২ হাজার ১০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল ডিএমপি। এসব ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের কাজটি হয় গুলশান থানায় স্থাপিত একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মূলত বাড়ির মালিকেরা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ খরচে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সমিতি বা সংগঠনের পক্ষ থেকেও অনেক এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। অপরাধী শনাক্তের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে এসব ক্যামেরার ফুটেজও পুলিশ সংগ্রহ করে।
ডিএমপির জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত জুলাই–আগস্টে বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা ধ্বংস করা হয়। এগুলো এখন মেরামতের কাজ চলছে।
মোহাম্মদপুরের অনেক স্থানে এখন সিসি ক্যামেরা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে অপরাধী শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) জিয়াউল হক
পুলিশ সূত্র বলছে, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, ভাটারা, বাড্ডা, রামপুরা, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী এলাকার বেশির ভাগ সিসি ক্যামেরা নষ্ট করা হয়েছে। যে কারণে অপরাধী শনাক্তে সমস্যা হচ্ছে। তবে অপরাধী শনাক্তে এখন আরও কিছু প্রতিবন্ধকতা যুক্ত হয়েছে।
ডিএমপির শীর্ষ পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন ডিএমপিতে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের অনেকে ঢাকায় এর আগে কখনো কাজ করেননি। ঢাকার অপরাধ ও অপরাধের ধরন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা নেই তাঁদের। আবার ঢাকায় নতুন হওয়ার কারণে এলাকাভিত্তিক যোগাযোগও নেই তাঁদের, সোর্সও তৈরি হয়নি। ফলে অপরাধীদের বিষয়ে তাঁরা সেভাবে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না। এর বাইরে আরও একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো প্রযুক্তিগত দক্ষতাসম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তার অভাব। দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তিগত তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশকেই ঢাকার বাইরে বা ‘নন অপারেশনাল ইউনিটে’ বদলি করা হয়েছে। যে কারণে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগছে।
ডিএমপির শীর্ষ পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন ডিএমপিতে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের অনেকে ঢাকায় এর আগে কখনো কাজ করেননি। ঢাকার অপরাধ ও অপরাধের ধরন সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা নেই তাঁদের। আবার ঢাকায় নতুন হওয়ার কারণে এলাকাভিত্তিক যোগাযোগও নেই তাঁদের, সোর্সও তৈরি হয়নি। ফলে অপরাধীদের বিষয়ে তাঁরা সেভাবে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না।