পোষ্য কোটাকে প্রতীকী ‘কবর’ দিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত পোষ্য কোটাকে প্রতীকী ‘কবর’ দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের পাশে পোষ্য কোটার প্রতীকী ‘মরদেহ’ সমাধিস্থ করা হয়।
এর আগে বিকেলে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে পোষ্য কোটার যৌক্তিকতা নিয়ে একটি উন্মুক্ত বিতর্কের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বিতর্কে কোনো শিক্ষক-কর্মকর্তা অংশ না নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে তিনজন তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন। এ সময় তাঁরা ঘোষণা দেন বিতর্কে পোষ্য কোটা নিয়ে যৌক্তিকতা দেখাতে পারলে এই কোটা বহাল থাকবে, অন্যথায় এই কোটা বাতিল করতে হবে।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে আইন বিভাগের অধ্যাপক মোর্শেদুল ইসলাম, একজন রিকশাচালক ও ব্যবসায়ীকে রাখা হয়। বিতর্কের শুরুতে উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। পরে চলে যুক্তি খণ্ডন পর্ব। তবে পোষ্য কোটার পক্ষে এ সময় কোনো কার্যকরী যুক্তি তুলে ধরতে পারেননি বিতার্কিকেরা। পরে বিচারকদের রায়ে পোষ্য কোটার বিপক্ষের শিক্ষার্থীরা জয়লাভ করেন। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হওয়া পোষ্য কোটা এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ‘কবর দেওয়া হবে’ বলে সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষার্থীরা। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের পাশে গিয়ে পোষ্য কোটার প্রতীকী ‘কবর’ দেন তারা।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের কাঁধে যেসব শিক্ষকদের হাত ছিল, পোষ্য কোটার আন্দোলনে তাঁরা আমাদের সঙ্গে নেই। জুলাই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার। কিন্তু এখনো যদি পোষ্য কোটা থাকে তাহলে জুলাই বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। আবু সাঈদসহ সব শহীদের রক্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে। আমাদের আন্দোলন শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক নয়, সারা দেশে যত জায়গায় চাকরির ক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা রয়েছে, তা সমূলে উৎখাত করতে হবে।’
আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশে প্রশাসন পোষ্য কোটা বাতিলের এই ন্যায্য দাবি মেনে নেবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। তবে তাঁরা আমাদের এই দাবি না মেনে পোষ্য কোটার মতো একটা অন্যায্য জিনিস ভোগ করে যাচ্ছে। আমরা আজকে গণতান্ত্রিক উপায়ে একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। বিতর্কে পোষ্য কোটার পক্ষের প্রতিনিধিরা হেরে যায়। এরপর পোষ্য কোটার কবর রচনা করি।’