যুদ্ধ না হলেও জ্বালানি–সংকটে পড়ত বাংলাদেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে কাজ করছেন। তিনি তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্যসচিব। চলমান জ্বালানি–সংকটে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কয়লা, পারমাণবিক, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহিউদ্দিন

  • জ্বালানি খাতে আমদানিনির্ভরতা মানেই অনিশ্চয়তার ঝুঁকি থাকে।

  • জনস্বার্থ নয়, দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর স্বার্থের দিকে নজর ছিল সরকারের।

  • জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল না। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সকে প্রস্তুত করা হয়নি।

  • বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) দেওয়া হচ্ছে। এতে লোকসান বেড়েছে পিডিবির।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সরকার বলছে, চলমান জ্বালানি–সংকটের মূলে আছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আপনি কী মনে করছেন?

আনু মুহাম্মদ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব দেশের অর্থনীতিতেই চাপ তৈরি করেছে। সে হিসেবে দেশের জ্বালানি–সংকটের ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই একটা কারণ। তবে নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, যুদ্ধ না হলেও জ্বালানি–সংকটে পড়ত বাংলাদেশ। এটির মূলে আছে বিদ্যুৎ খাতে নেওয়া সরকারের মহাপরিকল্পনা। যার লক্ষ্য ছিল দেশি-বিদেশি কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করা।

টানা তিনবারে সাড়ে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে বর্তমান সরকার। অথচ গ্যাস অনুসন্ধান যথাযথভাবে করা হয়নি। এ কারণে গ্যাসের সংকট তৈরি হয়েছে এবং সেটার দোহাই দিয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দিকে গেছে তারা। কয়লা, পারমাণবিক, এলএনজি–নির্ভরতার পেছনেই গলদ ছিল। আমদানিনির্ভরতা মানেই অনিশ্চয়তার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া মহাপরিকল্পনা নিয়ে দেশের ভেতরে কোনো আলোচনা হয়নি, দেশীয় বিশেষজ্ঞরা যুক্ত হননি। জাপানের একটি সংস্থা এটা করেছে, তারাও এ খাতে ব্যবসা করছে।

প্রশ্ন :

তাহলে কি জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে?

আনু মুহাম্মদ: পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির ক্ষেত্রে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের ঝুঁকির কথা ভাবা হয়নি। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে যা খরচ হচ্ছে, তার দশ ভাগের এক ভাগ দিয়ে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। পরিবেশগত শর্ত মানতে গিয়ে সারা বিশ্বেই কয়লাবিদ্যুৎ ক্রমেই ব্যয়বহুল হচ্ছিল; ওই সময় সরকার কয়লাবিদ্যুতের দিকে গেল। কয়লার দামও বিশ্ববাজারে বাড়ছিল। যুদ্ধ ছাড়াই এলএনজি বা কয়লার দাম বাড়ার আশঙ্কা ছিল।

কাণ্ডজ্ঞান ও দায়িত্ববোধ থাকলে এটা হওয়ার কথা নয়। জনস্বার্থ নয়, দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর স্বার্থের দিকে নজর ছিল সরকারের। সেটি সফল হয়েছে মহাপরিকল্পনায়। রাশিয়া, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানি ফায়দা নিয়েছে। কমিশন যারা পাচ্ছে তারা, দেশীয় ও বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়িক গোষ্ঠী—এ তিনটি মিলেই আজকের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।

প্রশ্ন :

বিদেশি গোষ্ঠীর সুবিধাও সরকারের বিবেচনায় ছিল?

আনু মুহাম্মদ: সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে, এমন কোনো প্রকল্প একটা দেশের সরকার নিতে পারে না। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণেই এটা করা হয়েছে। ভারতের এখানে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা আছে নানা রকম। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ছাড়াও নির্মাণ, কয়লা সরবরাহ, ব্যাংকঋণ দিয়ে সরাসরি লাভবান হচ্ছে ভারত। একইভাবে বিভিন্ন প্রকল্পে জাপান, রাশিয়া ও চীন লাভবান হচ্ছে। সরকার তাদের সুবিধা দিচ্ছে।

প্রশ্ন :

গ্যাস অনুসন্ধানে অবহেলা করার কারণ কী? দেশে গ্যাস উৎপাদন আরও বাড়ানোর সুযোগ কতটা ছিল?

আনু মুহাম্মদ: বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় এসেছে, দেশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বিপুল। কিন্তু সরকার উদ্যোগ নেয়নি। গ্যাস অনুসন্ধান না করার বিষয়টা পরিকল্পিতভাবেই হয়েছে। তারা বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভর করেছে। বিদেশি কোম্পানি বাড়তি মুনাফা নিতে চায়, তারা বাংলাদেশের স্বার্থ বিবেচনা করে না। জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা ছিল না। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সকে প্রস্তুত করা হয়নি।

প্রশ্ন :

সমুদ্র বিজয়ের ১০ বছর হয়ে গেল, তারও আগে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল; এখন পর্যন্ত একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করা যায়নি। সমুদ্রের সম্ভাবনা কেন কাজে লাগানো যাচ্ছে না?

আনু মুহাম্মদ: মিয়ানমার ইতিমধ্যে সমুদ্রে গ্যাস পেয়েছে। আর মাঝে বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কমে যাওয়ায় বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। তারা তো মুনাফা বিচার করে। বাংলাদেশের মতো দুর্বল দেশের জন্য তাই বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরতা সমস্যা তৈরি করে। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি দিয়ে সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান করা যায়, প্রয়োজনে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা যেতে পারে।

প্রশ্ন :

এখন অনেকে বলছেন, শুধু বাপেক্সের ওপর নির্ভর না করে দেশের স্থলভাগেও বিদেশি কোম্পানিকে কাজে লাগানো উচিত, আপনার কী মনে হয়?

আনু মুহাম্মদ: গত ৫০ বছরে কেন একটি সংস্থা সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না? ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস সংস্থা ওএনজিসি এর চেয়ে কম সময়ে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পেট্রোবাংলার মতো একই সময়ে মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস প্রতিষ্ঠার পর এখন সেটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান। পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তারা সক্ষমতা অর্জন করেছে। সরকার যদি জাতীয় সংস্থাকে পঙ্গু করতে চায়, তাহলে কীভাবে হবে? না হলে বাপেক্সের কাজ তিন গুণ দামে কেন রাশিয়ার গাজপ্রম পাবে?

প্রশ্ন :

কয়লা আমদানি খরচ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তি সক্ষমতার ভাড়া মিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের লোকসান করছে পিডিবি। এটি প্রতিবছর বাড়ছে। এমন পরিস্থিতি কি এড়ানোর বিকল্প কোনো উপায় ছিল না?

আনু মুহাম্মদ: বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ হলেও এ খাতের ব্যবস্থাপনা ভঙ্গুর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি অনেক এলাকায়। বিদ্যুতের খরচ নির্ভর করে জ্বালানি, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও সর্বোত্তম প্রক্রিয়া বাছাই করার মধ্যে। গ্যাস থেকে দীর্ঘদিন কম খরচে বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। এটা ছিল আশীর্বাদ, যা ধরে রাখা যায়নি। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানো বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যায়নি সরকার। জ্বালানি আমদানিনির্ভরতা ও কিছু গোষ্ঠীকে ব্যবসা দিতে গিয়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। বসিয়ে বসিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) দেওয়া হচ্ছে। এতে লোকসান বেড়েছে পিডিবির।

প্রশ্ন :

কিন্তু ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিনিয়োগ আসত না বলে সরকার দাবি করে।

আনু মুহাম্মদ: বিদ্যুৎ সক্ষমতা কম থাকলে সরকারের এ যুক্তি মানা যেত। সক্ষমতা বাড়ার পরও চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলো কেন তাহলে। চুক্তিটা এমনভাবে করা, বিদ্যুৎ না নিলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। আবার প্রয়োজন শেষেও চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। বারবার মেয়াদ বাড়ানোর কাজটি করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি থেকে সম্মিলিতভাবে সরকার এখন যা ঋণ চাইছে, তার চেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে গত ১১ বছরে। ৯০ হাজার কোটি টাকা গেছে এ খাতে, এর মধ্যে ১২টি কোম্পানি পেয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি সামিট, ইউনাইটেড, ওরিয়নসহ দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী গ্রুপ আছে এ তালিকায়। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি আরও বাড়ানো হচ্ছে। আমদানি না হলেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব সব সময় আছে এ খাতে। বড় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে জনসম্মতি নেওয়ার বিষয়টি পাত্তা দেওয়া হয়নি, বরং ২০১০ সালে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইন করা হয়েছে, যা দায়মুক্তি আইন। এই আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আদালতে যাওয়া যাবে না। কিছু গোষ্ঠীকে ব্যবসা দিতে পরিকল্পিতভাবে এটি করা হয়েছে; না হলে এ আইন করার দরকার হতো না।

প্রশ্ন :

জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ। এটা কি এড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল না?

আনু মুহাম্মদ: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো যৌক্তিক নয়। ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সরকার জ্বালানি তেলে কোনো ভর্তুকি দেয়নি, বরং ৪৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিপিসি, যার মধ্যে সম্প্রতি মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান করেছে। মুনাফার টাকা থেকেই এটি সমন্বয় করা যেত। এ ছাড়া বহু দেশ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুল্ক মওকুফ করেছে। দাম বাড়ানোয় মানুষ বা পুরো অর্থনীতির যে খরচ বেড়েছে; তা সরকারের শুল্ক আয়ের চেয়ে কয়েক গুণ কমে যেত দাম না বাড়ালে। শুল্ক নিয়ে সরকার যতটা লাভ করে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হয় জনগণের এবং অর্থনীতির। ৯ হাজার কোটি টাকা শুল্কের জন্য ১০ গুণ বেশি খরচ হচ্ছে অর্থনীতির। এর মধ্যে অনেক খরচ টাকায় পরিমাপ করা যায় না।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় মানুষ বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাবার কেনার সক্ষমতা কমায় পুষ্টি গ্রহণ কমছে, চিকিৎসা ও শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে কেউ কেউ। এর দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ক্ষতি হবে।

প্রশ্ন :

জ্বালানি–সংকট কাটাতে নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারের নামে দেশের কয়লা উত্তোলনের পরামর্শ দিচ্ছেন এখন অনেকে। আপনার পরামর্শ কী?

আনু মুহাম্মদ: বিভিন্ন দেশ কয়লার খনি ও কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছিল। সামনের পরিকল্পনায় কয়লার জায়গা ছিল না। বাণিজ্যিক স্বার্থ যাদের ছিল, তারা এটা মানতে পারছিল না। এখন যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে তারা এটি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে এটা স্থায়ী হবে না। কয়লা এখন আর সস্তা জ্বালানি নয়। কয়লা উত্তোলনে মাটি, বাতাস, পরিবেশের ওপর যে ক্ষতি; তা কমাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আছে। এতে কয়লা উত্তোলনের খরচ বেড়ে গেছে অনেক। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈশ্বিক ঝুঁকি কমেনি। তাই কয়লা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলেও তা প্রতিরোধের মুখে পড়বে। বিভিন্ন দেশে কয়লা ফিরে আসছে বলে মূলত বাণিজ্যিক প্রচার চালানো হচ্ছে।

যারা কয়লা উত্তোলন করতে বলছে, তারা শুধু কয়লা দেখছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে না। কৃষিজমি ধ্বংস, মানুষের স্থানান্তরের বিষয়টি ভাবছে না। কয়লা উত্তোলনে যে লাভ হবে, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি হবে অন্যান্য খাতে। তাই কয়লা উত্তোলন একটি লোকসানি প্রকল্প। বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যয় কমে আসছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হলো ভবিষ্যতের প্রযুক্তি। আর কয়লা হলো অতীতের এবং বাতিল প্রযুক্তি।

প্রশ্ন :

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলন নিয়ে এশিয়া এনার্জি আবার সক্রিয় হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে; তারা কি বর্তমান সংকটের সুযোগ নিতে চাইছে?

আনু মুহাম্মদ: বিশ্বের কোথাও কয়লা উত্তোলনের অভিজ্ঞতা নেই এশিয়া এনার্জির, এটি একটি ভুঁইফোড় কোম্পানি। ফুলবাড়ী থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য এটির জন্ম হয়েছে। আন্দোলনের মুখে কয়লা উত্তোলন করতে পারেনি। সরকারের দাবি, তাদের সঙ্গে এখন আর কোনো চুক্তি নেই। এখন এশিয়া এনার্জি চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে। একটি বৈশ্বিক দুষ্ট জোট এখানে কাজ করছে। এর মধ্যে সরকারের লোকজনও জড়িত আছে। সংকটের সুযোগ নিয়ে তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। ফুলবাড়ীসহ ছয় উপজেলার মানুষ জীবন দিয়েছে, তাদের প্রতিরোধের শক্তি এখনো দুর্বল হয়নি। সরকার আবার এখানে কোনো উদ্যোগ নিলে তা আত্মঘাতী হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সংকট উত্তরণে সরকার এখন কী করতে পারে? স্বল্প মেয়াদে সমাধানের কোনো উপায় কি আছে সামনে?

আনু মুহাম্মদ: সংকটের সমাধান না করে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কোনো সমাধান হতে পারে না। এটি ভুল ও ক্ষতিকর পদক্ষেপ। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করা উচিত। গ্যাসক্ষেত্র থেকে দ্রুত উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া জরুরি। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে গ্যাস অনুসন্ধানে করণীয় ঠিক করা দরকার। মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে। যাতে আগামী কয়েক দশক জ্বালানির চাহিদা পূরণ করা যায়।