চুল ঝরে পড়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এই সমস্যা নিয়ে মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তাও কম নয়। কিন্তু এখন আধুনিক চিকিৎসায় এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসার পাশাপাশি এখন দেশেই চুল প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এই চিকিৎসাসেবাকে সারা দেশে পৌঁছে দিতে চান চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এই লক্ষ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক চিকিৎসা কর্মশালা ও সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
আজ সকাল নয়টায় রাজধানীর প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে এই কর্মশালা ও সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। চুল প্রতিস্থাপনে হাতেকলমে প্রশিক্ষণের এই কর্মশালা ও সম্মেলনের আয়োজক সোসাইটি অব ডার্মাটোলজিক সার্জন অব বাংলাদেশ।
কর্মশালা পরিচালনা করছেন ভারতের বিশিষ্ট হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন কুলদ্বীপ সাক্সেনা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ৬৭ জন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশের প্রবীণ ডার্মাটোলজিক সার্জন অধ্যাপক এ জেড এম মাঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই কর্মশালা মধ্য দিয়ে চুল ঝরে পড়া রোধের আধুনিক চিকিৎসাসেবা সারা দেশে মানুষের নাগালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ থেকে রোগীরা উপকৃত হবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডার্মাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রাশেদ মোহাম্মদ খান বলেন, কর্মশালার মাধ্যমে চুল প্রতিস্থাপনের বিষয়ে চিকিৎসকদের আধুনিক চিকিৎসার অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি চিকিৎসাক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই আয়োজনের জন্য উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম বলেন, চিকিৎসকদের শিক্ষা কখনো শেষ হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞান ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। এর সঙ্গে সংগতি রেখে চিকিৎসকদের জ্ঞান-অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে। এই কর্মশালা থেকে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকেরা হাতেকলমে চুল প্রতিস্থাপনের শিক্ষা লাভ করবেন। তাঁদের থেকে রোগীরা উপকৃত হবেন। আবার নতুন প্রজন্মের চিকিৎসকেরাও তাঁদের কাছ থেকে শিখতে পারবেন।
চুল প্রতিস্থাপনের আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কুলদ্বীপ সাক্সেনা বলেন, এখন উন্নত মানের যন্ত্র দিয়ে চুল প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রতিস্থাপনে ব্যথা পাওয়া নিয়ে রোগীদের মনে একটা ভয় থাকে। কিন্তু এখন এমনভাবে চুল প্রতিস্থাপন করা হয় যে রোগীরা মোটেই ব্যথা পান না। প্রতিস্থাপনের পর মাথার ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় না। মোটামুটি ৪৮ ঘণ্টা পরই রোগী মাথা ধুয়ে ফেলতে পারবেন। এমনকি এই সময়ের পর রোগী চাইলে সুইমিং পুলে গিয়ে সাঁতারও কাটতে পারেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক এস এম বখতিয়ার কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসিফুজ্জামান।
আলোচনার পর চুল ঝরে পড়ার কারণ, প্রতিরোধ, চিকিৎসা ও প্রতিস্থাপন নিয়ে দুই পর্বে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ ও পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা হয়। বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পড়েন অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান, অধ্যাপক হাসিবুর রহমান, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সরকার মাহাবুব আহমেদ, ইশরাত খান, সাবরিনা আক্তার ও ফারহা নাজ রহমান। সঞ্চালনা করেন চিকিৎসক আয়োশা সিদ্দিকা ও জেসমিন আক্তার।
অধ্যাপক হাসিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অনেক কারণেই চুল ঝরে পড়তে পারে। তবে প্রধান কারণ বংশগত। চুল ঝরে পড়ার সঠিক চিকিৎসার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চুল ঝরে পড়ার প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসাতেই ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে শুধু ওষুধে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। তখন পিআরপি (প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা) দিতে হয়। এতেও চুল পড়া বন্ধ না হলে তখন নিদান হচ্ছে চুল প্রতিস্থাপন। ২০১৩ সাল থেকে দেশে চুল প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা চলে আসছে। তবে এখনো এই চিকিৎসা রাজধানীকেন্দ্রিক রয়েছে। চুল প্রতিস্থাপন যে খুব বেশি ব্যয়বহুল, তা নয়। খরচ নির্ভর করে কতটা স্থানে চুল প্রতিস্থাপন করা হবে, তার ওপর। আনুমানিক ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে চুল প্রতিস্থাপন করা যায়।
অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, দেশে চুল প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা অনেক উন্নত হয়েছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আধুনিক যন্ত্র ও সুযোগ-সুবিধা দেশে আছে। এখন চিকিৎসকদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো। প্রতিস্থাপনের পর রোগীরা চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে সঠিক পরিচর্যা করলে চুল ভালো থাকবে। চুল পড়ার দুশ্চিন্তা কেটে যাবে।