জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান ছিল দেশের ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক স্মরণীয় ঘটনা। এই অভ্যুত্থানের দিনগুলোতে প্রথম আলোর সাংবাদিকতা ও অভ্যুত্থানের নানা প্রামাণ্য উপকরণ নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় প্রথম আলোর আয়োজনে গত শুক্রবার থেকে চলছে ‘জুলাই-জাগরণ’ শীর্ষক আট দিনের প্রদর্শনী। প্রদর্শনী উপলক্ষে রয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
প্রদর্শনীতে আজ রোববার ছিল গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত চারটি বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা।
বিকেলে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বইগুলোর লেখক ও সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে দর্শকদের স্বাগত জানিয়ে সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
বইগুলোর মধ্যে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের লেখা ‘শেখ হাসিনার পতনকাল’। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজের লেখা ‘আমিই রাষ্ট্র: বাংলাদেশে ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানউজ্জামানের ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: নতুন পথে বাংলাদেশ’। তাঁর বইটি আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রথম মুদ্রণ দ্রুতই শেষ হয়েছে। এখন এসেছে দ্বিতীয় সংস্করণ। আর প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ সম্পাদিত ‘গণ-অভ্যুত্থানের সাক্ষ্য’।
আলোচনায় আফিস নজরুল প্রদর্শনী প্রসঙ্গে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান ছিল সাগরের মতো বিশাল একটি বিষয়। আমি তার ক্ষুদ্র একটি অংশে ছিলাম। এই প্রদর্শনী থেকে অভ্যুত্থানের সেই বিশালতা উপলব্ধি করা যায়।’ নিজের বই সম্পর্কে তিনি জানান, গত চার বছর প্রথম আলোতে যেসব কলাম লিখেছেন, সেখান থেকে বাছাই করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার যে বিপুলভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে, যে লুটপাট হয়েছে তার সময়চিত্র এসেছে এই বইয়ে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, পত্রিকায় তখন অনেক কিছুই সরাসরি লেখা যেত না। অনেক চাপ ছিল। বই করার সময় বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দেশ দুবার প্রবল স্বৈরতন্ত্র–কবলিত হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের করে গণতন্ত্রকে রোধ করার মাধ্যমে। তখন এক দেশ, এক নেতা, এক পার্টি মিলে সব একাকার হয়ে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। দ্বিতীয়বার আবার এক ভয়ানক স্বৈরশাসক হিসেবে আবির্ভূত হলেন শেখ হাসিনা। তিনি বইয়ে কেন বারবার ব্যক্তিগত স্বৈরতন্ত্রের সৃষ্টি হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করেছেন। পাশাপাশি কী করে এ থেকে উত্তরণ লাভ করা যায়, সেই দিকও উল্লেখ করেছেন।
অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানউজ্জামান বলেন, যে বিপুল গণ-অভ্যুত্থান হলো, তার গণ–আকাঙ্ক্ষা তিনি তাত্ত্বিকভাবে ব্যাখ্যা–বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন। ভবিষ্যতে এই গণ-আন্দোলন নিয়ে আরও অনেক বড় মাপের গবেষণার সুযোগ রয়েছে। তিনি প্রাথমিক কাজটি শুরু করেছেন।
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রথম আলো এই অভ্যুত্থানকে নিয়ে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। ক্রোড়পত্র প্রকাশ থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, গ্রাফিতি, কবিতা—এসব নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য লেখার সংকলন করে বইটি প্রকাশ করা হয়েছে।
মতিউর রহমান বলেন, গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে ভবিষ্যতেও অনেক কাজ হবে। প্রথম আলো এবং প্রথমা প্রকাশন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক রকমের কাজ করছে। এখন জুলাই অভ্যুত্থান নিয়েও বহুমাত্রিক কাজ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন ও চারটি বই প্রকাশিত হলো।
জুলাই-জাগরণ প্রদর্শনী চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।