যে দুই কারণে পাতিহাঁসের কালো ডিম
ভোলার চরফ্যাশনে পাতিহাঁসের কালো ডিম পাড়া নিয়ে উৎসুক জনতা তো বটেই, দেশের প্রাণিবিজ্ঞানীদের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে কোনো হাঁসের কালো রঙের খোলসযুক্ত ডিম পাড়ার ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটল বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের ভাষ্য মতে, এই ডিমের খোলস ছাড়া ভেতরের সাদা অংশ ও কুসুম অন্য হাঁসের ডিমের মতোই হবে, সেটি খাওয়া যাবে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, হাঁসটি পরে যে ডিমগুলো পাড়বে, তা ধীরে ধীরে সবুজ বা নীল রং থেকে সাদা রঙের হতে পারে। হাঁসটির শরীরের ভেতরে খোলস তৈরির প্রক্রিয়ায় কিছু উপাদান অনেক বেশি থাকায় তা কালো রঙের হয়েছে।
চরফ্যাশনের জিন্নাগড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাঢ়ীর বাড়ির বাসিন্দা আবদুল মতিনের (৪৭) খামারে ওই পাতিহাঁস গত দুই দিনে দুটি কালো রংয়ের ডিম পেড়েছে। বৃহস্পতিবারের ডিমটি আগের দিনেরটার চেয়ে কম কালো। এক স্থানে নীলচে ছোপ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। লোকজন এখন ওই ডিম দেখতে আসছে।
তবে হাঁসের ডিম যে একেবারেই কালো রঙের হয় না, তা কিন্তু নয়। যুক্তরাষ্ট্রের কায়োগা জাতের হাঁসের ডিম সাধারণত কালো হয়ে থাকে।
ডিমের খোলস সাধারণত তৈরি হয় ক্যালসিয়াম কার্বনেটের মাধ্যমে। ডিমের খোলস সাধারণভাবে সাদা হলেও প্রায়ই হালকা সবুজ, নীলচে আভা ও হালকা গোলাপি রঙের ডিমও চোখে পড়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রঙের এই পরিবর্তনের পেছনে দুটি জৈব উপাদান ভূমিকা রাখে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক আ ন ম আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাণিদেহের রক্তকণিকা ভেঙে বিলিভারডিন নামে একটি উপাদান বের হয়। এটা কম-বেশি হওয়ার কারণে ডিমের খোলসের রং নীলচে বা সবুজাভ হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে জরায়ুতে ডিমের খোলসটি পরিণত হওয়ার সময়ে তাতে গাঢ় সবুজ রঙের পিত্তরস বেশি থাকতে পারে। ওই দুটি উপাদান জরায়ুতে বেশি থাকলে তা থেকে ডিমটির রং কালো হতে পারে। এ ধরনের কালো ডিম হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশে খুবই ব্যতিক্রম। সম্ভবত এটি প্রথমবার ঘটল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাঁসের শরীরের ভেতরে ডিম তৈরির প্রক্রিয়ায় শুরুতে কুসুমটি তৈরি হয়। সেটি জরায়ু নালি থেকে দু–তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে জরায়ুতে প্রবেশ করে। আর জরায়ুতে ডিমটি থাকে ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা। ওই সময়ে ডিমের খোলসটি তৈরি হয়। ফলে মূলত জরায়ুতে থাকা বিলিভারডিন বা লোহিত রক্তকণিকার ভাঙা অংশ এবং পিত্তরস মিলে তা কালচে রং ধারণ করতে পারে।
বিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের মতেও মূলত ওই হাঁসের ডিমটি কালো রঙের হওয়া একটি বিরল ঘটনা। তবে তা অস্বাভাবিক নয়। আরও কয়েকটি ডিম দেওয়ার পর হাঁসটি নীলচে বা হালকা সবুজ রঙের ডিম পাড়বে বলে মনে করছেন তিনি। এটি ঘটছে মূলত ডিমটির খোলস তৈরির সময় তাতে পিত্তরস বেশি যুক্ত হওয়ার কারণে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রকৃতিতে নানা ধরনের ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে। সাদা রঙের বাঘ, লালচে শিয়াল থেকে শুরু করে কালো রঙের পাতিহাঁসের ডিম পাড়া বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক নয়। লাখো বা কোটি প্রাণীর মধ্যে দু–একটি ঘটনা এমন ব্যতিক্রমীভাবে ঘটে।