জৈন্তা রাজবাড়ি
কোথায় অবস্থিত: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তাপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে ‘জৈন্তা রাজবাড়ির’ অবস্থান।
কত পুরোনো: জৈন্তা রাজবাড়ি ১৫০০-১৬০০ সালে স্থাপিত। এটি মোগল আমলের একটি স্থাপনা।
ইতিহাস: রাজ্যটি একসময় বিস্তৃত ছিল ভারতের মেঘালয়, সিলেটের কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও সিলেট সদর উপজেলা পর্যন্ত। চন্দ্র ও বর্মণ রাজাদের পতনের পর দেব বংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন জয়ন্ত রায়। তাঁর এক মেয়ের নাম ছিল জয়ন্তী। ঐতিহাসিকদের ধারণা, রাজকুমারী জয়ন্তীর নামানুসারেই এই রাজ্যের নামকরণ করা হয় জৈন্তা।
দেখার আছে: জৈন্তা রাজবাড়িতে বর্তমানে মোগল আমালের তৈরি ভবনের ধ্বংসাবশেষ দেয়াল, নরবলি দেওয়ার স্থান, কূপ, দেয়ালে আঁকা তেজোদীপ্ত এক তরুণের অসাধারণ চিত্রকর্ম রয়েছে।
যাবেন কীভাবে: দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সিলেট রেলস্টেশন কিংবা কদমতলি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পৌঁছাতে হবে। এরপর সেখান থেকে রিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকা। সেখান থেকে বাসে সরাসরি জৈন্তাপুর উপজেলার বাজারে যাওয়া যায়। বাজারের পাশেই জৈন্তা রাজবাড়ি।
মণিপুরি রাজবাড়ি
কোথায় অবস্থিত: সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থল মির্জাজাঙ্গাল এলাকায়।
কত পুরোনো: ১৮২২-২৪ খ্রিষ্টাব্দে মণিপুরের রাজা গম্ভীর সিং রাজবাড়ি নির্মাণ করেন।
ইতিহাস: রাজা গম্ভীর সিংয়ের মণিপুরি রাজবাড়ির প্রাচীন স্থাপত্যকীর্তির অন্যতম নির্দশন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্বকীয়তা হারিয়েছে। বর্তমানে বাড়ির চারদিকে ধ্বংসাবশেষ কিছু সীমানাপ্রাচির, বাড়ির প্রধান ফটক, বালাখানার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এ ছাড়া মন্দিরে রাজার আমলের এক মণ ওজনের একটি ঘণ্টা রয়েছে, যাতে মণিপুরি ভাষায় খোদাই করা লেখা রয়েছে।
যাবেন কীভাবে: দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সিলেট রেলস্টেশন কিংবা কদমতলি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে পৌঁছাতে হবে। এরপর সেখান থেকে রিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল মণিপুরি রাজবাড়িতে যাওয়া যায়। অটোরিকশায় ভাড়া পড়বে ১৫০ টাকার মতো।
পুঠিয়া রাজবাড়ি
কোথায় অবস্থিত: এটি পাঁচআনি জমিদারবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। তবে ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজবাড়িটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করে। এর অবস্থান রাজশাহী জেলার পুঠিয়া পৌরসভায় রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে।
কোন আমলের: ১৮৯৫ সালে মহারানি হেমন্ত কুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানি শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তবে পুরো জমিদারবাড়িটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো।
দেখার কী আছে: ৪ দশমিক ৩১ একর আয়তনের জমির ওপর রাজবাড়ি চত্বর। রাধাসাগর দিঘি, মরাচৌকি দিঘি, হুগলা দিঘি রাজবাড়িটিকে বেষ্টনী আকারে ঘিরে রেখেছে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রাজবাড়ি রক্ষায় দিঘিগুলো খনন করা হয়েছিল। রাজবাড়ি ছাড়াও পুঠিয়ার রাজাদের স্মৃতিধন্য বড় গোবিন্দমন্দির, ছোট গোবিন্দমন্দির, বড় শিবমন্দির, ছোট শিবমন্দির, বড় আহ্নিকমন্দির, ছোট আহ্নিকমন্দির, জগদ্ধাত্রীমন্দিরসহ ১৫টি প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে।
যাবেন কীভাবে: পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে এক কিলোমিটার দক্ষিণে সংরক্ষিত প্রত্নস্থলে এই রাজবাড়ি। রাজশাহী শহর থেকে বাসে যাওয়া যায়। ৪০ থেকে ৫০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। রাজবাড়ির ভেতরে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা।
পি কে সেনের সাততলা
কোথায় অবস্থিত: চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকায় ১৮৯০ সালে প্রসন্ন কুমার সেন এটি নির্মাণ করেন। একসময় চট্টগ্রামের সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল এটি।
কত পুরোনো: ইংরেজ শাসন আমলে নির্মাণ করা হয় বাড়িটি। দেশভাগের পর প্রসন্ন কুমার ভারতে চলে গেলে ১৯৫০ সালে সুশীল কুমার ঘোষ বাড়িটি কিনে নেন। নতুন মালিকেরা বাড়িটির চেহারায় কোনো পরিবর্তন আনেননি। এটির স্থাপত্যরীতিও তাই অবিকৃত থেকে গেছে। তবে ভবনটি এখন নড়বড়ে। সাবধানে পা ফেলতে হয় ১৩৪ বছরের পুরোনো বাড়িটিতে। এখানে মোগল ও সনাতন বাঙালি রীতির মিশেল ঘটেছে।
দেখার কী আছে: চারদিকে টিনের প্রাচীর দেওয়া। ভাঙার কাজ শুরু হবে আর কয়েক দিন পর। পি কে সেন ভবনে ঢুকতেই তাই দীর্ঘশ্বাসটা যেন টের পাওয়া গেল। প্রশস্ত আঙিনায় প্রতিবছর মহা ধুমধাম করে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এখন চত্বরটা নীরব, সুনসান। মাঝের আধা তলার গোল ভেন্টিলেটর দিয়ে আসা বিকেলের আলোয় আলোকিত সিঁড়িঘর। প্রতিটি তলায় দুই দিকে দুটি সিঁড়ি উঠে গেছে। একটা অভ্যাগতদের, অন্যটা বাড়ির বাসিন্দাদের জন্য। চুন-সুড়কির রেলিংটা কারুকাজ করা। কর্ণফুলী নদীর তীরে সদরঘাট এলাকায় এই বাড়ি একসময় চট্টগ্রামের সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল, যেটি পরিচিত ‘পি কে সেনের সাততলা’ নামে।
কীভাবে যাবেন: চট্টগ্রাম নগরের যেকোনো স্থান থেকে প্রথম নিউমার্কেট মোড়ে যেতে হবে। সেখান থেকে সদরঘাট সড়ক, কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক ধরে গেলেই পি কে সেন ভবন। কোতোয়ালি মোড় কিংবা আলকরণ মোড় থেকেও একই পথে আসা যাবে।
—তথ্য দিয়েছেন মানাউবী সিংহ, সিলেট; শফিকুল ইসলাম, রাজশাহী ও ফাহিম আল সামাদ, চট্টগ্রাম