ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ঘোষণা আমার সঙ্গে আলোচনা করে দেয়নি: শিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেনছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ঢাকার বড় সাতটি কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ঘোষণা দিয়েছে, এটি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে দেয়নি। এ বছর থেকেই ভর্তি করা হবে না, এটার জন্য তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন না।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আগের দিন সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করা হচ্ছে। আর চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই ঘোষণায় এখন সাত কলেজে এ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। এখন এই সাত কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হবে কোন প্রতিষ্ঠানের অধীন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ঘোষণা দিয়েছে, এটা আমার সঙ্গে আলোচনা করে তো আর ঘোষণা দেয়নি। আমার নিজের পরামর্শ ছিল, যখন এ ঘটনাগুলো ঘটছিল, তখন কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছিল, আমি আরেকটি মিটিং থেকে বেরিয়ে গিয়ে শুধু বলেছিলাম, ওই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা তাঁদের ভর্তির বিষয়ে, পরীক্ষার বিষয়ে যতগুলো অসুবিধা আছে, যতদূর সম্ভব, যেগুলো যেন নিরসন করা হয়। কিন্তু এ বছর থেকেই আর ভর্তি করা হবে না, এটির জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।’

সাত কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠক ও বিবৃতির বিষয়ে তাঁর জানা ছিল না বলে উল্লেখ করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ দেখলাম একটি বিবৃতি দিয়েছে যে আগামী বছর না, এ বছর থেকেই আর সাত কলেজে ভর্তি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন) করা হবে না। ইউজিসির মাধ্যমে কিছু একটা করা হবে— এ রকম একটি ইঙ্গিত আছে। ইউজিসি তো বিশ্ববিদ্যালয় না। ইউজিসির ভর্তি করার ক্ষমতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় হতে হলে সনদপ্রাপ্ত হতে হয়। সনদপ্রাপ্ত না হওয়ার আগে আগাম ভর্তি, কোনো কিছু করা সম্পূর্ণ বেআইনি।’

এখন হঠাৎ যে পরিস্থিতি হলো, এই অচলাবস্থার নিরসন কী করে হবে, সেটা একলা তাঁর মাথায় ঢুকবে না বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আবার আলাপ-আলোচনা করব সব পক্ষের সঙ্গে। শিক্ষার্থীদের আমরা অবহেলা করতে পারি না, তাদের শিক্ষাজীবন চলতে থাকবে এবং শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে।’

প্রায় আট বছর আগে ঢাকার এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন নেওয়ার সিদ্ধান্তকে অপরিণামদর্শী হিসেবে বর্ণনা করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরও অনেক বেশি চাপ পড়েছে। পুঞ্জীভূত সমস্যা এসে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পড়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তিন মাস আগে ঢাকা কলেজের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করা হবে এবং সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমপর্যায়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি কাঠামো তৈরি করা হবে।

সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় করতে গেলে বিচার–বিশ্লেষণ করতে হয় উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, এসব কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে তো এইচএসসি পরীক্ষার্থী থাকে না। আবার এগুলোর শিক্ষকেরা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের। কাজেই অনেকগুলো মডেল বিবেচনায় আছে। এটি নিয়ে ইউজিসির নেতৃত্বে একটি বড় কমিটি হয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কারণ, একটি বিশ্ববিদ্যালয় করতে গেলে অনেক কিছু করতে হয়। প্রথমত এই কলেজগুলোকে সমন্বিত করে একটি কাঠামোয় এনে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করতে গেলে নতুন মডেল তৈরি করতে হবে। সেটির জন্যই কাজ চলছে। যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় করতে গেলে তার একটি বিধিবিধান লাগে। সবকিছু যাচাই–বাছাই করতে হয়।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা চেষ্টা করছিলেন যেহেতু এই সমস্যার জরুরি নিরসন হওয়া উচিত, তাই যত দ্রুত সম্ভব এই সাত কলেজকে নিয়ে একটি কাঠামো করে ওই পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া। এ ধরনের একটি ব্যবস্থা হয়েছিল, ছাত্ররা সেটি মেনে নিয়েই আন্দোলন স্থগিত করেছিল। কমিটি ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেই কী ধরনের মডেল হতে পারে, তা ঠিক করছে। এখন ঘটনা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ) হঠাৎ ঘটে গেল। অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেল। তিনি খুব মর্মাহত হয়েছেন। এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমনভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, শিক্ষকেরা কী ভূমিকা পালন করেছেন, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক সবকিছু তাঁর কাছে বেদনাদায়ক মনে হয়েছে।