অপরাধীদের শাস্তি দিতে ‘সরকারের ব্যর্থতার কারণে’ বারবার সাম্প্রদায়িক হামলা
বাংলাদেশের সমাজ ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে বাংলাদেশ এখন ক্ষতবিক্ষত। সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার না হওয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর নিয়মিত হামলা হচ্ছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধীরা উসকানি পাচ্ছে। নড়াইলের লোহাগড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বিভিন্ন সামাজিক, সাংষ্কৃতিক ও রাজনৈতিক দল এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার নড়াইলের লোহাগড়ায় এক ফেসবুক পোস্টে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছে বিভিন্ন দল ও সংগঠন।
আজ শনিবার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, অনুপম সেন, সেলিনা হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, সারওয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, আবেদ খান, আবদুস সেলিম, লায়লা হাসান, মফিদুল হক, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসির মামুন, হারুণ হাবীব, শফি আহমেদ, শিমূল ইউসুফ, সারা যাকের ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ এক বিবৃতি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার কারণে সমাজ বিভক্ত হচ্ছে ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ কোন স্তরে নেমে গেছে, তা ভেবে তাঁরা আতঙ্কিত। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির আলোকে শিক্ষা, প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সব স্তরকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলেছে, যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নতুন কিছু নয়। কোনো বিচার দ্রুততম সময়ে না হওয়ায় অপরাধীরা এ ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবার ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তারা।
অতীতে হিন্দুদের ওপর হামলা-নির্যাতনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যর্থতার কারণে বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ। দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এক বিবৃতিতে বলেছেন, হিন্দুদের ওপর হামলাকারীরা নিজেদের বিচারের ঊর্ধ্ব ভাবতে শুরু করেছে। তাঁরা বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির অবসান দাবি করেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোট বলেছে, দেশে অব্যাহতভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটছে। সরকার প্রায় নিষ্ক্রিয়-নির্বিকার, যা এ–জাতীয় ঘটনা বারবার সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইন্ধন জোগাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় দেশের সচেতন মানুষকে এগিয়ে আসতে ও স্থানীয়ভাবে সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এই জোট।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমান সরকারসহ অতীতের সরকারগুলোর কর্মকাণ্ড সমাজকে সাম্প্রদায়িকীকরণের ধারায় নিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ নজরদারি ও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন।
নড়াইলের এ ঘটনার প্রতিবাদে সিপিবি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ আগামীকাল রোববার বিকেলে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকেছে। বাসদ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, সাম্প্রদায়িক হামলার অনেক ক্ষেত্রে সরকারদলীয় লোকদের যুক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে একের পর এক হামলা–নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান (রুবেল) এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সরকার বারবার ব্যর্থ এবং স্পষ্টভাবেই এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেহারা উন্মোচন করে। অপরাধীদের শাস্তির পাশাপাশি প্রশাসনের অবহেলাকারীদেরও ছাড় না দেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
লোহাগড়ায় হামলার ঘটনায় আরও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন এবং ১৪টি সাংস্কৃতিক ফেডারেশন–সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ শিশু সংগঠন ঐক্য জোট ও বাংলাদেশ অভিনয় শিল্পী সংঘ।