সাদিক অ্যাগ্রোর দুই খামারের প্রায় পুরোটাই ছিল অবৈধ জায়গায়
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম’-এর দুটি খামারের অবৈধ অংশ ভেঙে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। খামার দুটির একটি সাতমসজিদ হাউজিংয়ের ১ নম্বর সড়কের শেষে রামচন্দ্রপুর খালের পাড়ে। অন্যটি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে নবীনগর হাউজিং এলাকার ৭ নম্বর সড়কের শুরুতে।
এর মধ্যে সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় মাত্র পৌনে ৫ শতক জমি ভাড়া নিয়ে ২০ শতকের ওপর খামার গড়ে তুলেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। সেখানে তারা রামচন্দ্রপুর খালের প্রায় ১৫ শতক জায়গা দখলে নিয়েছিল। আর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে নবীনগর হাউজিংয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারটি গড়ে তোলা হয়েছিল পুরোটাই অবৈধ জায়গায়। সিটি করপোরেশনের প্রায় ৩৩ শতক (এক বিঘা) জমিতে তৈরি করা হয়েছিল এই খামার।
কোরবানির জন্য এই সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়েছিলেন এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তুমুল আলোচনা হয়। এরপর মতিউর রহমান ও তাঁর পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে। মতিউরকে এরই মধ্যে এনবিআর থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তাঁর অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর এই দুই খামারের অবৈধ অংশে গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। দুপুর ১২টার পর প্রথমে সাদিক অ্যাগ্রোর সাতমসজিদ আবাসিক এলাকার খামারটির অবৈধ অংশ ভাঙার কাজ শুরু হয়। শুরুতে খামারের পশ্চিম অংশ ভাঙা হয়। এ অংশের নিচতলায় ছিল সাদিক অ্যাগ্রোর কার্যালয়। আর ওপরে টিনের ছাউনি ও বেড়ার একটি কক্ষে থাকতেন খামারের কর্মচারীরা। স্থাপনাটি ভাঙার কাজ শুরু হলে দোতলার কক্ষে দুজন অবস্থান নিয়ে উচ্ছেদে বাধা দেন। পরে পুলিশ সদস্যদের সাহায্যে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে খামারের প্রায় ১০ ফুট অবৈধ অংশ ভাঙা হয়।
বেলা দেড়টার পরে সাদিক অ্যাগ্রোর সাতমসজিদ হাউজিংয়ের খামারের পেছনের অংশ ভাঙার কাজ শুরু করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। এ সময় খামারটির পেছনের দিকে পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়। পেছনের দিকে সাদিক অ্যাগ্রোর খামারের জন্য ৫-১০ ফুট খালের জায়গা দখল করে রেখেছিল বলে জানান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর খামারের পেছনের অংশেই খাল ভরাট করা জায়গায় রিকশার গ্যারেজ ও বস্তিঘরের মতো বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা ছিল। অভিযানে এগুলোর বেশ কয়েকটি গ্যারেজ ও বস্তিঘর উচ্ছেদ করা হয়। তবে উচ্ছেদ অভিযানের খবর পেয়ে খাল ভরাট করে বসানো বস্তিঘরের বাসিন্দারা ছাউনির টিন ও বাঁশ-কাঠ খুলে ফেলতে শুরু করেন। পরে বাঁশ ও খুঁটিগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় খালের পাড়ে অবৈধভাবে টিনের ছাউনি দিয়ে বানানো সাতমসজিদ ইউনিট আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও ভাঙা হয়।
এরপর সাতমসজিদ হাউজিংয়ের ওই খামার থেকে প্রায় ৭০০ মিটার দূরে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে নবীনগর হাউজিং এলাকার ৭ নম্বর সড়কে সাদিক অ্যাগ্রোর অপর খামারে অভিযান শুরু হয়। দুপুর সোয়া দুইটার দিকে এই উচ্ছেদ অভিযানে সড়কের প্রায় ৩৩ শতাংশ জায়গা দখল করে গড়ে তোলা খামারটি ভেঙে দেওয়া হয়। ওই খামারের সঙ্গেই বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় ছিল। অভিযানে ওই কার্যালয়ও ভাঙা পড়ে।
ঢাকা উত্তর সিটির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযান চলাকালে সাদিক অ্যাগ্রোর কোনো কর্মকর্তা কিংবা জায়গার কোনো মালিক কাগজপত্র নিয়ে দেখা করেননি। আর সিটি করপোরেশনের অভিযান কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়। যারা খাল দখলকারী, তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান চালানো হচ্ছে।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সাতমসজিদ হাউজিংয়ে সাদিক অ্যাগ্রো খামারের জন্য যে জায়গা ভাড়া নিয়েছে, এর পরিমাণ প্রায় পৌনে ৫ শতক। কিন্তু তাদের খামার রয়েছে প্রায় ২০ শতক জায়গার ওপর। আর নবীনগর হাউজিংয়ের এলাকায় থাকা খামারটি সড়কের প্রায় এক বিঘা (৩৩ শতক) জায়গা বেদখল করে বানানো হয়েছিল।
উচ্ছেদের বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি মূলত ভাড়াটে, জায়গার মালিক না। যিনি মালিক (জায়গার), তিনি সিটি করপোরেশনকে তাঁদের কাগজপত্র দেখিয়েছেন, তাঁরা (সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা) সন্তুষ্টও হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত কোনো এক অদৃশ্য ফোন এল, বলল সাদিক অ্যাগ্রো ভাঙা হবে।’
তিনি আরও বলেন, সাদিক অ্যাগ্রো ভাঙার যুক্তি হিসেবে বলা হলো, যে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে, এর কোনো অনুমোদন নেই। অথচ রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোনো টিনশেড কিংবা অস্থায়ী ঘর নির্মাণে তাদের অনুমোদন নেওয়া লাগে না।
সাতমসজিদ হাউজিং এলাকায় থাকা সাদিক অ্যাগ্রোর খামারের জায়গার মালিক আবদুল আলীম তালুকদার নামের এক ব্যক্তি। উচ্ছেদ অভিযানের সময় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খালের পাড়ে জেলা প্রশাসনের বসানো খালের সীমানাখুঁটি রয়েছে। খামারের স্থাপনাটি ওই খুঁটির বাইরে পড়েছে।
অভিযানে বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে থাকা কয়েকটি স-মিল ও অন্যান্য কিছু অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। বিকেল সাড়ে চারটার পরে অভিযান শেষ হয়। এরপর ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, অভিযানে ৬০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে প্রায় ১০ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়। উচ্ছেদ করা মালামাল উন্মুক্ত নিলামে ৬৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আগামী তিন দিন এই উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে।