মায়ের ডায়ালাইসিসের খরচ জোগানো মুস্তাকিমের জামিন মঞ্জুর

কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করেন রোগী ও স্বজনেরা। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের কয়েকজনকে মারধর করে সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিসের খরচ বাড়ানোর প্রতিবাদ করায় গ্রেপ্তার মো. মুস্তাকিমের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আজ রোববার বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

মুস্তাকিমকে আইনি সহায়তা দেন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান আদালতের বারান্দায় প্রথম আলোকে বলেন, শুনানি শেষে আদালত মুস্তাকিমের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। তাঁর মুক্তির জন্য জামিননামা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হচ্ছে।

ছেলের জামিনের জন্য আজ সকালে আদালতে আসেন মা নাসরিন আক্তার। জামিন মঞ্জুর হওয়ার পর আদালতের বারান্দায় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। ছেলে জেলে যাওয়ার পর নিজের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে আসায় তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। যাঁরা আমার চিকিৎসা খরচ চালানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

আরও পড়ুন

৫৫ বছরের নাসরিন আক্তারের দুটি কিডনিই বিকল। সপ্তাহে ডায়ালাইসিস করাতে হয় তিনবার। সাত বছর ধরে এভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন তিনি। তাঁর স্বামী মারা গেছেন। একমাত্র অবলম্বন মাদ্রাসাপড়ুয়া ২২ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদ মুস্তাকিম। তাঁর টিউশনির টাকাতেই চলত নাসরিন আক্তারের ডায়ালাইসিসের খরচ।

গত মঙ্গলবার ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধি এবং সরকারিভাবে ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনের সড়কে কিডনি রোগী ও স্বজনদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মুস্তাকিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকেসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের ৫০ থেকে ৬০ জন রোগীর স্বজনকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধাদান ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ।

গত শুক্র ও  শনিবার প্রথম আলোর অনলাইন ও প্রিন্টে ‘ডায়ালাইসিসের খরচ জোগানো একমাত্র ছেলেটি জেলে, দিশাহারা মা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ওই মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করে আর্থিক সহায়তা ও ডায়ালাইসিসের দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন

আদালত সূত্র জানায়, আজ দুপুরে অর্ধশতাধিক আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। শুরুতে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান আদালতকে বলেন, টিউশনি করে মুস্তাকিম তাঁদের মায়ের চিকিৎসা চালাতেন। তিনি কারাগারে থাকায় তাঁর মায়ের চিকিৎসা নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া আইনজীবী শুভাশীষ শর্মা শুনানিতে অংশ নেন। তিনি আদালতকে বলেন, জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘ডায়ালাইসিসের খরচ জোগানো ছেলেটি কারাগারে, দিশাহারা মা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে। বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। গ্রেপ্তার মুস্তাকিম মাদ্রাসা ছাত্র। তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা নেই। ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পুলিশের ওপর আক্রমণ করেননি। তাঁর হাতে লাঠিসোঁটা ছিল না। তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হোক।

গাউছিয়া কমিটির আইনজীবী ফয়েজ উদ্দিন শুনানিতে বলেন, মুস্তাকিম করোনার সময়ে জীবন বাজি রেখে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ভালো ছেলে। মায়ের ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

আরও পড়ুন