বাংলাদেশের ভালোবাসার কথা জানাব মেসিদের: ক্যাফিয়ারো
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফুটবল, ক্রিকেট আর ব্যবসার হাত ধরে এগিয়ে যাবে দুই দেশের বন্ধুত্ব।
নীল–সাদা জার্সির আর্জেন্টিনা মানেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে ম্যারাডোনা আর মেসি। বিশেষ করে কাতার বিশ্বকাপের সময় লাতিন আমেরিকার দেশটি তো বটেই, সারা বিশ্ব জেনেছে ১৭ হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব ঘুচিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে আর্জেন্টিনা কতটা আপন।
আর্জেন্টিনার ফুটবল দল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উচ্ছ্বাসের কথা অন্যদের মতো দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো গণমাধ্যমে জেনেছিলেন।
গত সোমবার তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসেন সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো। উপলক্ষ ছিল ঢাকায় আর্জেন্টিনার দূতাবাস চালু। গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে দূতাবাস চালুর প্রেক্ষাপটসহ দুই দেশের নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন।
৪৫ বছর পর ঢাকায় দূতাবাস আবার চালু হলো। লিওনেল মেসি ঢাকায় আসবেন কবে? জবাবে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমবার ঢাকায় পৌঁছানোর পর থেকেই আর্জেন্টিনার প্রতি এ দেশের মানুষের ভালোবাসা যে কতটা গভীর, তা বুঝতে পেরেছি। এই শহরে পতপত করে উড়ছে আর্জেন্টিনার পতাকা, লোকজন আমাদের ফুটবল দলের জার্সি পরে ঘুরছেন। এসব দেখে একবারও মনে হয়নি আর্জেন্টিনার বাইরে কোথাও আছি! বুয়েনস এইরেসে ফিরে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কথা জানিয়ে দেব মেসিদের।’
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি, মেসি বাংলাদেশে আসবেন। এখানকার লোকজনের মধ্যে যে আবেগ আর ভালোবাসা পেয়েছি, আর্জেন্টিনার জাতীয় দল অবশ্যই তার চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণতা অনুভব করবে। জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচি থাকার পরও মেসিরা বাংলাদেশে এসে এখানকার মানুষের উষ্ণতা টের পাবেন।’
সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতির বন্ধন আছে। এই সেতুবন্ধ রবিঠাকুর আর ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর (আর্জেন্টাইন বুদ্ধিজীবী, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন) হাত ধরে। ফুটবল যে এই ঘনিষ্ঠতাকে আরও নিবিড় করেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফুটবলের পাশাপাশি ব্যবসা আর সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদারের জন্যই ৪৫ বছর বিরতির পর ঢাকায় আবার আর্জেন্টিনা দূতাবাস চালু হয়েছে।
সান্তিয়োগা ক্যাফিয়েরা বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ফুটবল আর আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কারণে দূতাবাস চালুর সিদ্ধান্তটা ত্বরান্বিত করেছে। গত বছর নিউইয়র্কে আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আলোচনায় ঢাকায় পুনরায় মিশন চালুর প্রসঙ্গটি এসেছিল। দেখুন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকাটা প্রধান। কখনো কখনো রাজনীতিকে পেছনে রেখে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে নিয়ে আসতে হয়।
আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবল ক্লাবগুলোর একটি রিভারপ্লেটের প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি এখানে দুই দেশের ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। আশা করি, দুই পক্ষের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়, কারিগরি সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণের মতো ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।’
ফুটবলে যেমন আর্জেন্টিনা বিশ্বসেরা, ক্রিকেটে বেশ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো বলেন, আর্জেন্টিনার জাতীয় ক্রিকেট দল আছে। তবে দলটি বাংলাদেশের মানের কাছাকাছি নয়। এখানে আর্জেন্টিনাকে সহায়তা করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের প্রতি ভালোবাসার স্মারক হিসেবে আর্জেন্টিনার লোকজনের ফেসবুকে একটি পেজ আছে।
পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। প্রতিবারের মতো এবারের বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণকারী অনেক দেশের জার্সি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। এ বিষয়ে সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো জানান, ফুটবল জার্সি ছাড়া আরও অন্যান্য ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। একটি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সুপারশপ ইউনিমার্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। শিগগিরই আর্জেন্টিনার উৎপাদিত পণ্য ইউনিমার্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
সান্তিয়াগো ক্যাফিয়েরো বলেন, আর্জেন্টিনা সব সময় বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে আগ্রহী। এ জন্য আর্জেন্টিনা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক উদ্যোক্তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সঙ্গে এ নিয়ে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।