উড়োজাহাজের টিকিটের দাম কমল ৭৫ শতাংশ

সরকারের কড়া তদারকি ও কঠোর নিয়মকানুন বাস্তবায়নের ফলে সৌদি আরবগামী উড়োজাহাজের টিকিটের দাম ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছেছবি: ফ্লাইট এক্সপার্টের সৌজন্যে

সরকারের কড়া তদারকি ও কঠোর নিয়মকানুন বাস্তবায়নের ফলে সৌদি আরবগামী উড়োজাহাজের টিকিটের দাম ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।

সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত বছরের ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে সৌদি আরবের প্রধান কিছু শহরে যাওয়ার টিকিটের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বিশেষভাবে, ‘গ্রুপ বুকিং স্কিম’–এর কারণে টিকিটের দাম ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। তবে সরকারের কঠোর নজরদারির ফলে এ পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এসেছে।

বর্তমানে টিকিটের দাম ৪৮ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে নেমে এসেছে। বেশ কিছু এয়ারলাইনসে দাম্মাম ও রিয়াদ রুটে টিকিট মাত্র ৩৫ হাজার টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে।

বিমানভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি কঠোর নির্দেশনা জারি করে। আকাশপথে যাত্রীদের স্বার্থরক্ষায় উড়োজাহাজের টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে ১০টি নির্দেশনা জারি করা হয়। সৌদি আরবগামী ফ্লাইটগুলোর টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং কৃত্রিমভাবে স্ফীত মূল্য ঠেকানোই ছিল এই নির্দেশনার মূল লক্ষ্য।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিমানভাড়া কমাতে দায়ী কৃত্রিম আসন–ঘাটতির সমস্যাটির সমাধান করেছে কর্তৃপক্ষ। বিমানে ভ্রমণকারী, বিশেষ করে সাশ্রয়ী মূল্যের বিমানের ওপর নির্ভরশীল অভিবাসী কর্মীদের ওপর আর্থিক বোঝা কমাতে এটিকে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে আটাব।

ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইটে হিডেন চার্জ বাদে জেদ্দা থেকে ঢাকা টিকিট বুকিংয়ের মূল্য
ছবি: ফ্লাইট এক্সপার্টের সৌজন্যে

নতুন নিয়ম অনুসারে, টিকিট বুকিংয়ের সময় যাত্রীর নাম, পাসপোর্টের বিবরণ ও পাসপোর্টের একটি কপি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে এয়ারলাইনসগুলো আগে ব্লক করা টিকিট বাজারে উন্মুক্ত করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে কম্পিউটার রিজারভেশন সিস্টেমে আসনের প্রাপ্যতা বেড়েছে। এতে যাত্রী ও ভ্রমণ সংস্থাগুলো রিয়েল-টাইম তথ্য পেয়ে সুবিধা পাচ্ছে, পাশাপাশি প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকিটের দামও কমছে।

আটাবের মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান, এই পদক্ষেপ শুধু যাত্রীদের জন্যই নয়, বরং পুরো ভ্রমণশিল্পের জন্যও ইতিবাচক। কারণ, এটি বাজারকে আরও স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক করবে। তিনি বিমান সংস্থাগুলোকে আগের অনিয়ন্ত্রিত ভাড়া বৃদ্ধির চর্চায় ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে সরকারি পর্যবেক্ষণ জোরদারের আহ্বান জানান। পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং যাত্রীদের টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করতে অতিরিক্ত আইন ও বিধিনিষেধ প্রণয়নের সুপারিশ করেন।

আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগ যদি সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এটি কেবল উড়োজাহাজের টিকিটশিল্পে স্থায়ী পরিবর্তন আনবে না, বরং বাংলাদেশি যাত্রীরা, বিশেষ করে অভিবাসীকর্মীরা প্রতিযোগিতামূলক ও সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্রমণ থেকে উপকৃত হবে।’

এ বিষয়ে ফ্লাইট এক্সপার্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম বলেন, ‘এই উদ্যোগ থাকলে ট্রাভেল মার্কেটে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে, যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর ফলে ভ্রমণকারীরা উপকৃত হবেন। আমরা সরকারের এই ইতিবাচক পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।’

বিবৃতিতে আটাব উড়োজাহাজের টিকিটের মূল্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব বেগম নাসরিন জাহানের অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি আটাব এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারকে টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি এবং বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানায়। সরকারের কড়া তদারকিতে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। হিডেন চার্জ বাদে উড়োজাহাজের টিকিটের সঠিক মূল্য জানতে চোখ রাখতে পারেন ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইটে