ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ: উদ্ভাবন ও শিক্ষার উজ্জ্বল বাতিঘর
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার পরিসরে লিবারেল আর্টস শিক্ষা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একবিংশ শতাব্দীর দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে শিক্ষার্থীদের শুধু পেশাদার দক্ষতাই নয়, বরং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সৃজনশীলতা এবং বহুমুখী দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। এই চাহিদাগুলো পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)। যেখানে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সমাজসেবার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
একাডেমিক উৎকর্ষ ও বহুমুখী শিক্ষার পথিকৃৎ
২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউল্যাব বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃত। শিক্ষার্থীদের শুধু তথ্য ও জ্ঞান প্রদানই নয়, বরং তাঁদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করাই এর লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঠ্যক্রম ‘লিবারেল আর্টস’ শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা শিক্ষার্থীদের একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেয়। এখানে শিক্ষার্থীরা দুটি পৃথক বিষয়ে ‘মেজর’ ও ‘মাইনর’ করার সুবিধা পান, যা তাঁদের বহুমাত্রিক চিন্তাধারা গঠনে সহায়তা করে।
ইউল্যাবের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামসমূহ
উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য উপযোগী সাতটি প্রোগ্রাম রয়েছে ইউল্যাবে। সেগুলো হলো—
• ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ (বিবিএ, এমবিএ, ইএমবিএ)
• গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা (এমএসজে)
• কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই)
• ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই)
• বাংলা ভাষা ও সাহিত্য (বিএলএল)
• ইংরেজি ও মানবিক শিক্ষা (ডিইএইচ)
• যোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় (স্নাতকোত্তর)
গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি: ইউল্যাবের ভিত্তি
ইউল্যাব কেবল একাডেমিক শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি গবেষণা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এর উন্নত গবেষণাগার ও ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। ইউল্যাবে রয়েছে এনএলপি ও মেশিন লার্নিং রিসার্চ ল্যাব, আইওটি ল্যাব, এসিএম কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং ল্যাব, মিডিয়া ও রেডিও ল্যাব এবং টেলিকমিউনিকেশন ল্যাব, যা শিক্ষার্থীদের গবেষণায় সহায়ক। এই সুবিধাগুলো শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করে এবং তাঁদের ভবিষ্যতের প্রযুক্তিভিত্তিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করে।
শিক্ষা ও বিনোদনের সমন্বয়ে প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস
শিক্ষার্থীদের জন্য ইউল্যাব একটি প্রাণবন্ত ক্যাম্পাস-জীবন নিশ্চিত করে। এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার, গ্রন্থাগার, ক্যাফেটেরিয়া ও খেলার মাঠ। শিক্ষার্থীরা ২৪টি সক্রিয় ক্লাবের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পান।
যাঁরা চলচ্চিত্র নির্মাণের দিকে নিজের ক্যারিয়ারকে অগ্রসর করতে চায়, তাঁদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই চর্চার অন্যতম কেন্দ্র ‘সিনেমাস্কোপ’। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আগ্রহীদের জন্য চর্চার মাধ্যম ‘ইউল্যাব টিভি’। চোখধাঁধানো ছবি তুলে সবাইকে অবাক করে দেওয়া প্রতিভাবান ভবিষ্যতের চিত্রগ্রাহকের পছন্দের ক্লাব হতে পারে ‘শাটারবাগ’। জনসংযোগ বিভাগে নিজের দক্ষতা উন্নয়নে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ‘পিআরফোরইউ’। এ ছাড়া পররাষ্ট্র ও কূটনৈতিক বিষয়ে কৌতূহলী ও আগামীর রাষ্ট্রদূতের দক্ষতা বিকাশের পরিচর্যা হতে পারে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইউল্যাব মান’ থেকে। বাকি ক্লাবগুলোও শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটাতে ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়ক।
আন্তর্জাতিক সংযোগ ও শিক্ষার্থীদের বৈশ্বিক সুযোগ
শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউল্যাব। এটি যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাডেমিক মাইগ্রেশন ও সহযোগিতা কার্যক্রম পরিচালনা করে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন, গবেষণা ও শিক্ষামূলক বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সামাজিক উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের ‘হাল্ট প্রাইজ কম্পিটিশন’ এবং ‘ডিউক অব এডিনবার্গ অ্যাওয়ার্ড’ ইত্যাদিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক মোবাইল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (ডিআইএমএফএফ)’ এবং ‘অ্যাক্সিস মিল’ নামের উদ্যোগ ইউল্যাবের আন্তর্জাতিক পরিসরে সংযুক্ত থাকার প্রমাণ বহন করে।
ক্যারিয়ার গঠন ও ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
শুধু একাডেমিক শিক্ষা নয়, ইউল্যাব শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করতে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সার্ভিস’ শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত করে। নিয়মিত ক্যারিয়ার কর্মশালা, ইন্টার্নশিপ সুযোগ, চাকরি মেলা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং সুবিধা শিক্ষার্থীদের পেশাগত দুনিয়ায় প্রবেশের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
উদ্ভাবন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
ইউল্যাবের শিক্ষা শুধু শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে। এর সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট, সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড সোসাইটি, সেন্টার ফর আর্কিওলজিক্যাল স্টাডিজ, সেন্টার ফর বাংলা স্টাডিজ ইত্যাদি বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্র শিক্ষার্থীদের সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত করে।
শিক্ষার্থীদের বহুমুখী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনন্য প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের এমন দক্ষতায় গড়ে তুলছে, যাতে তাঁরা শুধু নিজেদের ভবিষ্যৎই নয়, বরং পুরো সমাজে ও দেশের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।