জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা নিয়ে গুজব না ছড়ানোর আহ্বান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরছবি: ওয়েবসাইট থেকে

জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অসুস্থ হওয়ার ঘটনার সঙ্গে টিকার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এটা নিয়ে গুজব না ছড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবু জাফর। এ টিকার সঙ্গে বন্ধ্যত্বেরও কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কথা বলেন। সম্প্রতি ভোলায় টিকা দেওয়ার সময় আতঙ্কে কিছু শিক্ষার্থীর জ্ঞান হারানোকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া গুজব প্রসঙ্গে তিনি কথাগুলো বলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া টিকা কার্যক্রমের সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের কোনো নেতিবাচক সম্পর্ক নেই। এ ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

আবু জাফর বলেন, মঙ্গলবার একটি কেন্দ্রে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলাকালে টিকা নেওয়ার পর হঠাৎ দুজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের অসুস্থ হওয়া দেখে পরে আরও কয়েকজন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে।

অসুস্থ হওয়ায় যে পাঁচ ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তারা টিকা নেয়নি। টিকা নেওয়ার আগেই তারা অসুস্থ হয়েছিল। কোনো টিকাকেন্দ্রে এভাবে একাধিক কিশোরী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়াকে আতঙ্কজনিত (ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস) বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এবার সাত বিভাগে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ জনকে এইচপিবি দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে স্কুলে ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯১৮ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছে ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৩২৬ কিশোরী।

আবু জাফর জানান, ১৮ লাখের বেশি মানুষকে এরই মধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৭১ জনের সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তা শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যা একেবারেই নগণ্য। শতকরা চার থেকে পাঁচজন আক্রান্ত হলে তখন সেটাকে সরাসরি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

ভোলার ঘটনা ব্যাখ্যা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সেখানে দুজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে টিকা দেওয়া হয়। তারা টিকা নেওয়ার পর কিছুটা অসুস্থতা অনুভব করলে তাদের একটি কক্ষে শুইয়ে দেওয়া হয়। এই অবস্থা দেখে সেখানে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জ্ঞান হারায়। জ্ঞান হারানোদের পাঁচজন টিকা গ্রহণ করেনি। তাই প্রাথমিকভাবে এটিকে আতঙ্কজনিত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশে এই কর্মসূচিতে ব্যবহৃত এইচপিভি টিকা বেলজিয়ামে উৎপাদিত হয়। বিশ্বের ১৪০টি দেশে এই টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মরক্কো, কুয়েত, মালদ্বীপসহ ১৪টি মুসলমানপ্রধান দেশ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো শিব্বির আহমেদ ওসমানী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ড. মো. রিজওয়ানুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ডা. এ বি এম আবু হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।