মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের সফটওয়্যারের মালিক দাতো আমিন ও তাঁর বাংলাদেশি সহযোগী রুহুল আমিন যৌথভাবে সিন্ডিকেট (চক্র) তৈরি করেছিলেন। সাড়ে পাঁচ লাখ কর্মী পাঠিয়ে ওই চক্র অভিবাসীদের কাছ থেকে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার (২৪ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাৎ করেছে।
‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
রামরুর প্রতিবেদন বলছে, অভিবাসী কর্মীদের অনেকেই মালয়েশিয়া গিয়ে কাজ না পেয়ে অসহায় জীবন যাপন করেন অথবা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। বাংলাদেশ সরকার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে চারজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে চক্রের দুই হোতাকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে।
প্রতিবছরই গড়ে ১০ শতাংশের বেশি হারে প্রবাসী আয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে রামরু। সংস্থাটি বলছে, ২০২১ সাল থেকে প্রবাসী আয়ে কিছুটা ভাটা পড়ে। প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার পর অন্তত ছয় মাস লাগে দেশে টাকা পাঠাতে। এ বছর প্রথম সাত মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত চার মাসে এসেছে ৯ বিলিয়ন ডলার। বছর শেষে মোট প্রবাসী আয় ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় প্রবাসী আয় বাড়তে পারে ৩২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যদিও যেসব দেশে অভিবাসন বেশি হয়েছে, সেসব দেশ থেকে প্রবাসী আয় বাড়েনি।
প্রবাসী আয় বাড়লেও আগের বছরের তুলনায় এবার কমছে অভিবাসন। জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৫৫ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। বছর শেষে এটি ১০ লাখের কিছু বেশি হতে পারে। ২০২৩ সালে বিদেশে কর্মী গেছেন ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন। এতে অভিবাসীর সংখ্যা এ বছর কমতে পারে ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ। গণ-অভ্যুত্থানের কারণে জুলাই ও আগস্টে অভিবাসনের গতি ব্যাহত হয়েছিল, যার প্রভাব সার্বিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। নভেম্বর পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৬৯৬ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন। মোট অভিবাসীর ৬ শতাংশ নারী কর্মী। করোনা মহামারির সময় বাদ দিলে গত ১০ বছরে নারী অভিবাসনের সর্বনিম্ন রেকর্ড এটি। গত বছরের তুলনায় নারী অভিবাসন এবার কমেছে ২২ শতাংশ। রামরুর এক গবেষণা মতে, শোভন কর্মক্ষেত্রের অনিশ্চয়তার কারণে নারী কর্মীরা ক্রমেই অভিবাসনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
লিখিত প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী। এতে বলা হয়, নীতিনির্ধারক, উচ্চপর্যায়ের আমলা এবং ব্যক্তি খাতের ভেতরে আঁতাত গড়ে ওঠার কারণে বাংলাদেশে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে রামরু। এর মধ্যে বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ লাউঞ্জ চালু করাকে অভিবাসীদের সম্মান জানানোর সুন্দর দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে বেশ কিছু দেশে শ্রম অভিবাসন বন্ধ রয়েছে। ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ বছর কোনো অভিবাসন হয়নি। ইতালিতে জাল কাগজপত্রের কারণে ও সার্বিয়ার আবেদনপ্রক্রিয়ার সার্ভার অকেজো হওয়ায় ওই দেশগুলোয় শ্রম অভিবাসন কার্যক্রম থেমে আছে।
অভিবাসন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে রামরুর প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, জাতীয় বাজেটের ন্যূনতম ১ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ করা বা বছরে পাঠানো প্রবাসী আয়ের ৫ শতাংশ প্রবাসী কর্মী ও তাঁর পরিবারের অধিকার রক্ষা এবং সেবায় ব্যবহার করা। মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের বাংলাদেশ অংশের প্রধান উদ্যোক্তা এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা।