বিভিন্ন সংগঠনের শোক প্রকাশ
সন্জীদা খাতুন দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল, লড়াকু হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন
বাংলাদেশের সংস্কৃতির কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব, সংগীতজ্ঞ সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ছায়ানট। সন্জীদা খাতুন ছিলেন ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। শোক জানিয়েছে তাঁর একসময়ের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগও। বিভাগটি শোকবার্তায় বলেছে, ‘আর কদিন পরই ৪ এপ্রিল সন্জীদা খাতুন ৯৩ বছরে পা দিতেন। তাঁর জীবনাবসান জাতীয় ক্ষেত্রে এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। এক সপ্তাহ ধরে তিনি এই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়া এবং কিডনির রোগে ভুগছিলেন।
ছায়ানট জানিয়েছে, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সন্জীদা খাতুনের মরদেহ রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে নেওয়া হবে। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ বেলা আড়াইটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ সন্জীদা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
গানের মানুষ সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে বাংলা একাডেমি, বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠন। বাংলা একাডেমি থেকে পাঠানো শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সন্জীদা খাতুন আমৃত্যু বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতির চর্চায় নিবেদিতপ্রাণ ও লড়াকু যোদ্ধা ছিলেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সাংস্কৃতিক সংগ্রামের সঙ্গে তাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। রবীন্দ্র-নজরুল অধ্যয়ন এবং দেশজ সংস্কৃতির অনুশীলন ও বিকাশে তিনি কিংবদন্তির ভূমিকা পালন করে গেছেন।’
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন তাদের শোকবার্তায় বলেছে, ‘ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি, রবীন্দ্র–গবেষক ও সংগীতজ্ঞ সন্জীদা খাতুনের প্রয়াণে আমরা শোকাহত।’
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী তাদের শোকবার্তায় বলেছে, ষাটের দশকে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদ আন্দোলনে এবং ছায়ানট প্রতিষ্ঠার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সন্জীদা খাতুন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় গিয়ে শিল্পীদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। আজীবন প্রগতিশীল সংস্কৃতিচর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এই গুণী শিল্পী। সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার ও শোকসন্তপ্ত স্বজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে গভীর শোক জানানো হয়েছে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সন্জীদা খাতুন আমৃত্যু সমাজ প্রগতির অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশবাসী একজন দক্ষ সংগঠক হারাল।
সন্জীদা খাতুনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে গভীর শোক জানানো হয়েছে। সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের দেওয়া যৌথ শোকবার্তায় বলা হয়েছে, সংস্কৃতি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন আমৃত্যু একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে গেছেন। একজন দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল, সাহসী এবং লড়াকু মানুষ হিসেবে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তাদের শোকবার্তায় লিখেছে, বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের উত্থানে ও বিকাশে ষাটের দশকে যে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ড. সন্জীদা খাতুন রবীন্দ্রসংগীত ও বাঙালি সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে, তা তাঁকে বাঙালি জাতির হৃদয়ে চিরকাল অম্লান করে রাখবে।
চারণ সংস্কৃতি কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দেওয়া শোকবার্তায় বলা হয়েছে, ‘বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক, বাংলার সাংস্কৃতিক আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র সন্জীদা খাতুন আজীবন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন লালন করেছেন, মানবতার জয়গান গেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা একজন সাংস্কৃতিক যোদ্ধাকে হারালাম। তাঁর পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল।’