২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিকেল গড়াতেই মানুষের ভিড় লেক, পার্ক আর উদ্যানে

ছবি তুলে, ঘুরে ঈদ আনন্দ উদ্‌যাপন করেছেন অনেকে। আজ হাতিরঝিলেছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

রাজধানীর শাহিনবাগ এলাকার বাসিন্দা মাহিনুর আক্তার। আড়াই মাস আগে তিনি কন্যাসন্তানের মা হয়েছেন। পথে ঝক্কিঝামেলার কথা মাথায় রেখে এবার ঈদে গ্রামের বাড়ি যাননি। অবশ্য মাহিনুরের স্বামী ঈদে গ্রামের বাড়ি গেছেন। আর তিনি ঈদ করেছেন বাড্ডায় বড় ভাইয়ের বাসায়।

ঈদ আনন্দ উদ্‌যাপনে আজ শুক্রবার বিকেলে হাতিরঝিলে ঘুরতে বের হয়েছেন মাহিনুর আক্তার, সঙ্গে ছিল আড়াই মাসের রুবাইয়াও। মাহিনুরের বড় ভাইয়ের স্ত্রী শাহানা আক্তার ও তাঁর দুই সন্তান সাইমুন ইসলাম ও রাবেয়া বশরি, বড় বোন আয়েশা আক্তার, বোনের দুই মেয়ে ইয়ামুনি আক্তার ও সুরাইয়া আক্তার তাঁদের সঙ্গে বেড়াতে বের হয়েছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাতিরঝিলের রামপুরা অংশে কথা হয় মাহিনুরের সঙ্গে।

মাহিনুর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে গেলে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। ঢাকায় তো সেই সুযোগ নেই। কারণ, পরিচিত যাঁরা ঢাকায় থাকেন, তাঁরাও গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন। তাই স্বজনদের নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে এসেছেন।

মাহিনুর বলেন, ‘হেঁটে ঝিলের পাড় ঘুরেছি। কখনো বসেছি, ছবি তুলেছি। বাচ্চারা অনেক আনন্দ পেয়েছে।’

মাহিনুরদের মতো অনেকেই আজ ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছেন। আজ বিকেলে ধানমন্ডি লেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান ও সংসদ ভবন এলাকায় গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল রমনা উদ্যান এলাকায়। এ ছাড়া পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়ক ও উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকাতেও মানুষের ভিড় ছিল।

বায়োস্কোপ দেখছে এক শিশু। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
ছবি: প্রথম আলো

হাতিরঝিলে ওয়াটার বাসে নৌ ভ্রমণ করতে দেখা যায় অনেককে। ৩০ মিনিটের এই নৌ ভ্রমণের জন্য নেওয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৮০ টাকা। হাতিরঝিলের তেজগাঁও, পুলিশ প্লাজা ও রামপুরায় ওয়াটার বাসের টার্মিনালে মানুষের ভিড় দেখা যায়।

বিকেল সোয়া চারটার দিকে ধানমন্ডি লেকের রবীন্দ্র সরোবর অংশে গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কেউ এসেছেন ছোট সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে, কেউ–বা বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের নিয়ে। লেকের পাড়ে বেড়ানোর পাশাপাশি কেউ কেউ প্যাডেল বোট নিয়ে লেকে ঘুরে বেড়ান।

স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ধানমন্ডি লেকে বেড়াতে যান মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা দুলাল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ছুটি থাকলেও এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারেননি। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মল চত্বর, টিএসসি, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর এলাকায় অনেকেই গল্প-আড্ডায় সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ বিভিন্ন স্থাপনা ও ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন।

নাগরদোলায় শিশুরা। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
ছবি: প্রথম আলো

ঘুরতে বের হওয়া মানুষদের কেন্দ্র করে টিএসসির পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ ফটকের সামনে রিকশার ভিড় দেখা যায়। উদ্যানের ভেতরে ভ্রাম্যমাণ ভাজাপোড়া ও ফুচকা-চটপটি বিক্রির দোকানগুলোতেও মানুষের ভিড় ছিল। উদ্যানে বেড়াতে যাওয়া অনেককেই সন্তান ও স্বজনদের নিয়ে নাগরদোলায় চড়তে দেখা গেছে। পাশেই ছিল বায়োস্কোপ। অনেক অভিভাবক সন্তানদের বায়োস্কোপ দেখাচ্ছিলেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই সন্তান আলমাস হোসেন ও সাদিয়া আক্তারকে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন পুরান ঢাকার নাজিরাবাজারের বাসিন্দা লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, অন্য সময় ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো হয় না। ঈদের ছুটিতে সেই সুযোগ হয়েছে।

পাশের শিশুপার্ক দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ পেশায় গাড়িচালক লিয়াকত। তিনি বলেন, পার্ক চালু থাকলে বাচ্চারা সেখানে আরও বেশি আনন্দ পেত।

প্যাডেল বোট নিয়ে লেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। আজ ধানমন্ডি লেকে
ছবি: প্রথম আলো

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাছেই রমনা পার্কে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ক্লাব ও মৎস্য ভবনসংলগ্ন ফটকে মানুষের বেশ ভিড়। পার্কের ভেতরে খোলা জায়গায় সবুজ ঘাসের মধ্যে গোল হয়ে বসে আছেন অনেকেই। কেউ আবার লেকের পাড় ধরে বানানো হাঁটার পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পার্কে যে অংশে শিশুদের খেলার বিভিন্ন উপকরণ রাখা, সেই অংশে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। কোনো কোনো রাইডে চড়াতে অভিভাবকদের রীতিমতো সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। মেয়ে সামিরা ইয়াসমিনকে দোলনায় চড়াতে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছেন বলে জানান লালবাগের বাসিন্দা সালমা বেগম।

সালমা বেগম বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময়ে সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া যায় না। পেশাগত কারণে সবাই ব্যস্ত থাকেন। সবার ছুটি একসঙ্গে মিলেও না। কিন্তু ঈদে সেই সুযোগটা হয়। এই সুযোগে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি। বাচ্চারা অনেক মজা করছে। আমরাও আনন্দ পাচ্ছি।’