৩ মাস জনগণের শাসন না থাকা সমর্থন করে না সংবিধান

সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, ‘গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে নয়; গণতন্ত্রকে প্রবহমান রাখতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে। কারণ, আমাদের সংবিধান তিন মাসের জন্য জনগণের শাসন থাকবে না—এটি সমর্থন করে না। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার ধারণা সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং ১, ৭, ৮ ও ১১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি।’
গতকাল বুধবার বৈষম্য বিলোপ আইনের খসড়া প্রণয়ন বিষয়ে আইন কমিশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক এসব কথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা প্রবর্তনে আনা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক।
রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিচারপতি খায়রুল হক আরও বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে জনগণ দেশের একমাত্র মালিক। জনগণের ইচ্ছায় দেশ পরিচালিত হবে। জনগণের এই সার্বভৌমত্ব চিরবহমান। জনগণের এ সার্বভৌমত্ব এক দিনের জন্য স্থগিত রাখা যায় না। রায়টি পড়লে এর মমার্থ বুঝতে পারবেন। সে জন্য তিন মাসের জন্য জনগণের এ সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে কোনো যুক্তি খুঁজে পাইনি।’
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যারা হামলা করেছে তারা দুষ্কৃতকারী। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে বলে আমি স্বীকার করি না। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেভাবে নিগৃহীত ও নির্যাতিত হচ্ছে, তা দুঃখজনক।’
মতবিনিময় সভায় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানও বক্তব্য দেন। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এখনই সময়; প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও অপশক্তিকে রুখতে হবে। বাংলাদেশকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের পূর্ণ নিরাপত্তা রাষ্ট্র ও সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।’
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হলো, নির্বাচনকালীন যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়, সে জন্য মাঠে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিন দেখলাম, একজন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করল। ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ করা হলো; তাও দেখলাম।’
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের যে এত আশ্বস্ত করা হলো, আশানুরূপ কোনো কর্মদক্ষতার প্রমাণ নেই। রাষ্ট্র ও সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এ ব্যর্থতা যেন প্রলম্বিত না হয়। ব্যর্থতার অর্থ হতে পারে আমাদের দেশের ওপর বিরাট একটি জনগোষ্ঠীর আস্থা উঠে যাওয়া। প্রলম্বিত হওয়ার আরেকটি অর্থ দাঁড়াতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে বাংলাদেশ, সে অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।’
বৈষম্য বিলোপবিষয়ক আইন প্রণয়ন বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরেন কমিশনের মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা ফউজুল আজিম। অনুষ্ঠানে কমিশনের সদস্য এম শাহ আলম, নাগরিক উদ্যোগের জাকির হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান, আইনজীবী লুবনা ইয়াসিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।