টিসিবির পণ্য
১৭৮ টাকা কমে পেতে দুই কিলোমিটার হাঁটা
বাজারে সয়াবিন তেল ও চিনির দাম চড়া। একটু কম দামে পেতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে ভিড়
নিলুফা আক্তার পুরান ঢাকার লালবাগের খাজিদেওয়ান এলাকার বাসিন্দা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে পাওয়া যায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সংলগ্ন পলাশী বাজারে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের পেছনে। তিনি দুই লিটার সয়াবিন তেল এবং দুই কেজি করে চিনি ও ডাল কেনেন।
নিলুফা বলেন, টিসিবির ট্রাক থেকে এই পরিমাণ পণ্য কিনতে তাঁর ৪২০ টাকা লেগেছে। বাজারে দাম অনেক বেশি।
বাজারে সয়াবিন তেল, চিনি ও ডালের যে দাম, তার সঙ্গে টিসিবির পণ্যের দরের তুলনা করে দেখা নিলুফার সাশ্রয় হয়েছে ১৭৮ টাকা। তবে তাঁকে এ জন্য নিজের বাসা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে পলাশী আসতে হয়েছে। টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে প্রায় এক ঘণ্টা।
ট্রাক এলেই আমিও চলে আসি। যখন যা পাওয়া যায়, তা-ই কিনি। কারণ, বাজার থেকে এখানে দাম কম।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত রোববার থেকে প্রতি লিটার ১০০ টাকা দরে তেল এবং ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করছে। বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়তে বাড়তে লিটার ১৪৪ টাকায় উঠেছে। চিনির দামও বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। মোটা দানার মসুর ডাল বাজারে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজারে দাম যখন অনেক চড়া, তখন নিলুফার মতো সীমিত আয়ের মানুষের ভিড় বেড়েছে টিসিবির ট্রাকের পেছনে। করোনাকালে আয় কমে যাওয়া মধ্যম আয়ের মানুষেরাও লাইনে দাঁড়াতে আর সংকোচ বোধ করছেন না।
বুয়েটের নিরাপত্তাকর্মী আবু তাহেরকে দেখা গেল, টিসিবির ট্রাকের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি জানান, তাঁর ছয় সন্তান। বড় ছেলে আর তিনিই সংসারে উপার্জনকারী। করোনার মধ্যে ছেলের চাকরিটি চলে গেছে। একার আয় দিয়ে চলা সম্ভব হচ্ছে না।
তাহের বলেন, ‘ট্রাক এলেই আমিও চলে আসি। যখন যা পাওয়া যায়, তা-ই কিনি। কারণ, বাজার থেকে এখানে দাম কম।’
ঢাকায় টিসিবির ৮২ জন পরিবেশক রয়েছে। গতকাল ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পণ্য নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি শেষ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক আসার আগেই মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। পলাশী ছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব, ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে, সূত্রাপুর থানা ও শ্যামলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায় টিসিবির ট্রাকের পেছনে সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন।
কারওয়ান বাজারে টিসিবির পরিবেশক মেসার্স এস এন এন্টারপ্রাইজের মালিক নিতীশ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, আগে দিনের বরাদ্দ পণ্য বিক্রি শেষ করতে রাত হয়ে যেত। এখন কয়েক ঘণ্টায় শেষ হয়ে যায়।
এদিকে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ধূপখোলা মাঠসংলগ্ন কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা চাল, ডিম ও চিনির দাম বেড়েছে বলে জানান। এই বাজারে গতকাল সরু মিনিকেট চাল কেজি ৫৫ থেকে ৬২ টাকা এবং নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। মাঝারি মানের বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছিল কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, বোরো মৌসুমের চাল বাজারে আসার পর দাম সাধারণত অনেকটাই কমে। এ বছর ততটা কমেনি।
ব্যবসায়ীরা সম্প্রতি সয়াবিন তেলের নতুন দাম প্রতি লিটার ১৫৩ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই দামের তেল ধূপখোলা বাজারে পৌঁছায়নি। নতুন করে কেজিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বেড়ে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা দরে।
কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের দাম। কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া গতকাল ফার্মের মুরগির ডিম ডজন ১০৫ টাকা, হাঁসের ডিম ডজন ১২০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা ও সোনালিকা (কক) ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।