সূর্য সেনের আত্মত্যাগ ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়

মাস্টারদা সূর্য সেন

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের আত্মত্যাগের কথা সবাইকে জানাতে হবে। তাঁর স্মৃতি রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মাস্টারদা সূর্য সেনের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পূর্তিতে বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ, ইন্ডিয়া আয়োজিত এক ওয়েবিনারে আলোচকেরা এ কথা বলেন।


ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশরা তাঁকে ফাঁসি দেয়। কিন্তু তাঁর আত্মত্যাগ ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানের সঞ্চালনায় ‘আর্মড স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট কলোনিয়াল রুল: ফ্রম দ্য ব্যাটল অব জালালাবাদ টু দ্য লিবারেশন ওয়ার অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মালেকা বেগম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মাদ সেলিম, বিপ্লবী সুরেশ দের ছেলে ও ভারতের শ্রী লেদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সত্যাব্রত দে, কলকাতার সংবাদপত্র এই সময়–এর চিফ অব নিউজ ব্যুরো ও সিনিয়র এডিটর অমল সরকার, কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের সহযোগী অধ্যাপক বিমল শঙ্কর নন্দ এবং ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজের পরিচালক অরিন্দম মুখার্জি বক্তব্য দেন।

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, সূর্য সেন চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুট করার পর একটি গ্রামে অবস্থান করেন। কিন্তু তাঁরই এক কর্মী নেত্র সেন বিশ্বাসঘাতকতা করে ব্রিটিশদের ঘোষিত ১০ হাজার টাকা পুরস্কারের লোভে তাঁকে ধরিয়ে দেন। একইভাবে বঙ্গবন্ধুকে যাঁরা হত্যা করেন, তাঁরাও আওয়ামী লীগের ভেতরের লোক ছিলেন। অনেকে আগের দিন তাঁর বাড়িতে খাবারও খেয়েছিলেন।


কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, সূর্য সেন ও বঙ্গবন্ধু দেশকে যে চেতনায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, সেটাই হোক আজকের দিনের সূর্যশপথ।
মাস্টারদা সূর্য সেন ও বঙ্গবন্ধু সংগ্রামের মাধ্যমে যে সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন, সেটি এখনো অর্জিত হয়নি বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক মালেকা বেগম। তিনি বলেন, দেশপ্রেম রোমান্টিক মানব-মানবীর প্রেমের চাইতেও রোমাঞ্চকর। বিপ্লবের জন্য ডাকাতি করে টাকাপয়সা জোগাড় করা মাস্টারদা পছন্দ করেননি। তিনি মনে করতেন আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করলে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।


মালেকা বেগম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও সূর্য সেন যে সমাজ চেয়েছিলেন, সেই সমাজ গড়তে পারলাম না। তবে এখনো সেই সুযোগ রয়েছে। সে জন্য বঙ্গবন্ধু ও সূর্য সেনের আত্মত্যাগের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মাদ সেলিম বলেন, চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুটের আগে থেকেই সূর্য সেন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। তখন সারা ভারত ইংরেজদের দখলে ছিল। কিন্তু মাস্টারদা ইংরেজদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেছিলেন, সংগ্রাম করেছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীনতার চেতনার কথা জানিয়েছিলেন।
কলকাতার সাংবাদিক অমল সরকার বলেন, গঙ্গা-পদ্মার যেমন মিলন রয়েছে, তেমনি ভারতের স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্যে অসম্ভব মিল রয়েছে। সূর্য সেন সেই সাফল্যের পিলার পুঁতে যান।
কলকাতার চারুচন্দ্র কলেজের শিক্ষক বিমল শঙ্কর নন্দ বলেন, ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুট সাম্রাজ্যবাদের গোড়ায় আঘাত করেছিল।
ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজের পরিচালক অরিন্দম মুখার্জি চট্টগ্রামে সূর্য সেনের নামে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাকেন্দ্র তৈরির আহ্বান জানান।