‘দেশটা হচ্ছে মা। মায়ের মমতার মতো দেশ পাব বলে মায়ের নির্দেশেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম। এতকাল পরও দেশ নামের মা-টা সুখী হয়েও সুখী হতে পারছে না। তাই আমরা যাঁরা যুদ্ধ করেছি, এখন সুখী দেশের জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করতে হবে।’
আপ্লুত কণ্ঠে এ আহ্বান জানালেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত মুক্তিযোদ্ধা জেমস লিও ফার্গুসন। গত শুক্রবার রাতে সিলেট শিল্প ও বণিক সমিতি (চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) তাঁকে সম্মাননা জানাতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তিনি বক্তব্যে এ কথা বলেন।
জেমস লিও ফার্গুসন মুক্তিযুদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টরের অধীন যুদ্ধ করেছেন। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া চা-বাগানের মালিক তিনি। কানাইঘাটের লক্ষ্মীপাশা ইউপির টানা চারবারের চেয়ারম্যান জেমস লিও ফার্গুসন এলাকাবাসীর কাছে ‘নানকা’ ডাকনামে বেশি পরিচিত। তাঁর মা জুন ফার্গুসন ছিলেন লোভাছড়া চা-বাগানের মালিক ও ব্যবস্থাপক। জুন ফার্গুসনের বাবা আর্থার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাসদস্য হিসেবে যুদ্ধ করেন। তাঁর বাবা ডোনান্ড ফার্গুসন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন।
জেমস লিও ফার্গুসনকে নিয়ে ১২ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা ফার্গুসন: মাটির টানে যুদ্ধ করেছি’ শিরোনামে প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এবারের বিজয় দিবসে সিলেট শিল্প ও বণিক সমিতি তাঁকে সম্মাননা জানানোর আয়োজন করে।
নগরের জেল রোড এলাকায় সমিতির মিলনায়তনে সম্মাননা অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাসুদ আহমদ চৌধুরী। পরে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধা এম আবিদ আলী, প্রীতিভূষণ চৌধুরী, রজনীকান্ত দাশ, কৃষ্ণকান্ত দাশ, প্রীতিশ কুমার দাশ, ক্ষিরোদ মোহন দাশ স্মৃতিচারণা করেন।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এই প্রথম কোনো সম্মাননা নিয়েছেন জানিয়ে লিও ফার্গুসন বলেন, ‘আমি আমৃত্যু একজন যোদ্ধা ও জনপ্রতিনিধি পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চাই।’সিলেট চেম্বারের সেমিনার উপকমিটির আহ্বায়ক ও পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী বলেন, জেমস লিও ফার্গুসন অনেকের কাছে অজানা ছিলেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদনের বরাতে তাঁর প্রসঙ্গে এখন সবাই জেনেছে।