সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণে আসামি করা হলো যাঁদের

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ৪৪ জনের মৃত্যু এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেনছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ৪৪ জনের প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় আট আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ডিপোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।

আসামিরা হলেন বিএম কনটেইনার ডিপোর মহাব্যবস্থাপক নাজমুল আক্তার খান, উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) নুরুল আক্তার খান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) খালেদুর রহমান, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উল্লাহ, জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (প্রশাসন) নাছির উদ্দিন, সহকারী ব্যবস্থাপক আবদুল আজিজ, ডিপোর শেডের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও সহকারী ডিপো ইনচার্জ নজরুল ইসলাম।

সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ সিদ্দিকী বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে মামলাটি করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে মানুষের মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় শুধু কর্মকর্তাদের আসামি করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডিপোর মালিকপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। ডিপোর বেশ কয়েকজন শ্রমিকও এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁরা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যাঁর প্রতিষ্ঠান, তিনি যেভাবে চালাবেন সেভাবে চলবে। ডিপোর ভেতর রাসায়নিক থাকার বিষয়টি অনেক শ্রমিক জানতেন না। এগুলোকে আলাদা করে রাখা হয়নি। যার কারণে আগুন লাগার পরও শ্রমিকেরা আশপাশে ছিলেন। অনেকে ফেসবুকে লাইভ দিয়েছেন। রাসায়নিক থাকার বিষয়টি জানলে সবাই দূরে সরে যেতেন। মালিকের ইচ্ছা ছাড়া ডিপোতে রাসায়নিক রাখার ক্ষমতা কারও নেই।

আগুন নেভাতে বিশেষ ধরনের পোশাক পরে তৈরি হচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা
ছবি: জুয়েল শীল

নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগে বিএম কনটেইনার ডিপো গড়ে ওঠে। এখানে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপের অংশীদারি রয়েছে। যে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের রাসায়নিক পদার্থ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটিও স্মার্ট গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্স লিমিটেডের। পোশাক, এলপিজি ও খাদ্যপণ্য খাতে বিনিয়োগ রয়েছে স্মার্ট গ্রুপের।

এই কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএম কনটেইনার ডিপোর চেয়ারম্যান বার্ট প্রঙ্ক। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। পরিচালক হলেন স্মার্ট জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান। মুজিবুর সম্পর্কে মোস্তাফিজুরের ভাই। মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে আছেন। গত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। তবে তাতে সাড়া দেয়নি দল।

গত শনিবার রাতে বিস্ফোরণে ৪৪ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের নয়জন সদস্য রয়েছেন, যাঁরা আগুনে নেভানোর চেষ্টার মধ্যে রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনারে বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কনটেইনারে রাসায়নিক থাকার কথা মালিকপক্ষ তাঁদের জানায়নি। সে কারণেই বিস্ফোরণে এত বেশি মানুষ হতাহত হয়েছে।

মরদেহ উদ্ধার করে এক জায়গায় নিয়ে এসে দাঁড়ান স্বেচ্ছাসেবীরা
ছবি: জুয়েল শীল

এরপরেও মালিককে কেন আসামি করা হয়নি, সে প্রশ্নে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এখন ডিপোর কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে। তদন্তে মালিকসহ যাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তবে ডিপোর মালিকদের একজন মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে সংশয়ের কথা আগেই বলে আসছেন বিএনপির নেতারা।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মালিকের বাইরে কিছু করতে পারেন না। সীতাকুণ্ডের ঘটনায় মালিকপক্ষ কোনো অবস্থাতেই নিজেদের দায় এড়াতে পারেন না।

আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘যাঁর হাত যত লম্বা, তাঁর পার পাওয়ার সুযোগও বেশি। এ দেশে এটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই। যার কারণে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। পার পেয়ে যাচ্ছে মূল অপরাধীরা।’