সিলেটে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ২৫ ধারা জারি

সিলেটের গোপালটিলায় ‘গোপাল জিউর আখড়া’ মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তিতে প্লট-বাণিজ্য ঠেকাতে গতকাল শনিবার শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণ-অনশন কর্মসূচি ছিল। একই স্থানে কর্মসূচির ডাক দেয় ‘গোপাল জিউর আখড়া’ মন্দির কমিটি। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে ২৫ ধারা জারি করে পুলিশ। পরে প্লট-বাণিজ্য ঠেকাতে আন্দোলনকারীরা নগরের জিন্দাবাজারে সমাবেশ ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। মন্দির কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয় নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়।সিলেট মহানগরের পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় এসএমপি আইনে ২৫ ধারা জারি করা হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে শনিবার রাত নয়টা পর্যন্ত তা বলবৎ থাকে।’কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ২৫ ধারা জারি ও পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে গতকাল নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের বন্দরবাজার এলাকার সিলেট ব্রহ্মমন্দির থেকে ‘গোপালটিলা ভূমি আত্মসাৎ প্রতিরোধ আন্দোলনের’ নেতারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যেতে থাকেন। মিছিলটি জিন্দাবাজার এলাকার মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। তাঁরা সেখানে সিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় বসে পড়েন। সেখানে তাৎক্ষণিক সমাবেশ হয়। সমাবেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব, গোপালটিলা ভূমি আত্মসাৎ প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক অমলেন্দু ধর, যুগ্ম সম্পাদক অসিত ভট্টাচার্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বাসদের সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক রনেন সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন।রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসনের বাধার কারণে আমরা রাজপথে সমাবেশ করেছি। কিন্তু মন্দিরের জায়গা নিয়ে এ ধরনের আন্দোলন কারও কাছেই কাম্য নয়। কিন্তু আমরা নিরুপায়।’ বেলা আড়াইটায় গোপালটিলা ভূমি আত্মসাৎ প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতারা সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা আজ পয়লা মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় এবং দেশে-বিদেশে জনমত গড়ে তুলতে জনসংযোগের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। পাশাপাশি মন্দিরের জায়গা রক্ষার দাবিতে মহাসমাবেশ আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গোপালটিলা ভূমি আত্মসাৎ প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটিকে ৩০ এপ্রিল (গতকাল) কর্মসূচি পালনের জন্য শহীদ মিনার বরাদ্দ দেন। পরে একই স্থানে কর্মসূচি পালনের জন্য মন্দিরের জায়গা জবরদখলকারীদেরও বরাদ্দ দেন। এতে করে ভূমিদস্যুদের সঙ্গে মেয়রের আঁতাতের বিষয়টি টের পাওয়া যায়। এক মাসের মধ্যে মন্দিরের জায়গা অবৈধভাবে বন্দোবস্ত দেওয়ার বিষয়টি বাতিল না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। যোগাযোগ করা হলে মেয়র কামরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি পক্ষকে শহীদ মিনারে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কোন পক্ষকে দেওয়া হয়েছে—এ মুহূর্তে আমি জানি না। সেখানে যদি দুটি পক্ষ কর্মসূচি ঘোষণা করে, তাহলে বিষয়টি তো পুলিশই দেখবে—শুধু শুধু আমাকে জড়ানো হচ্ছে কেন?’ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর। দুই পক্ষকে সমঝোতার মানসিকতা নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা উচিত।’ এদিকে বেলা ১১টায় কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় গোপাল জিউর আখড়া মন্দির কমিটির উদ্যোগে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মন্দির কমিটির সভাপতি কংকন রায়। বক্তব্য দেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রণজিত সরকার, হিমাদ্রী কর পুরকায়স্থ, মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুপদ দে, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পংকজ পুরকায়স্থ প্রমুখ।প্রসঙ্গত, প্রায় চার মাস আগে ‘গোপাল জিউর আখড়া’ মন্দিরের প্রায় চার একর জায়গা ছাত্রলীগের নেতাসহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজনের নামে বন্দোবস্ত দেয় মন্দির পরিচালনা কমিটি। একে ‘প্লট-বাণিজ্য’ আখ্যা দিয়ে তা ঠেকাতে আন্দোলন শুরু হয়। মন্দির কমিটিও পাল্টা আন্দোলন শুরু করে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ মার্চ মহানগর পুলিশ ওই এলাকায় ৩৫ ধারা জারি করে। পরে মন্দির পরিচালনা কমিটির এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই স্থানে দুই মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করেন।