রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাচ্ছেন পেশাদার কূটনীতিকেরা
প্রায় এক দশক পর সরকার মস্কোতে একজন পেশাদার কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয় বিষয়াবলি ও কনস্যুলার) কামরুল আহসানকে রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। একইভাবে ১০ বছর পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরিবর্তে ভারতের হাইকমিশনার পদেও পেশাদার কূটনীতিককে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে ভারতে হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগের প্রস্তুতি চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রথম আলোর কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারত ও রাশিয়া ছাড়াও ১৩টি দেশ এবং মিশনে (নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি) রাষ্ট্রদূত পদে পরিবর্তন আসছে। ওই দেশগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকজন পেশাদার কূটনীতিককে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো হচ্ছে। আর তিনজন কূটনীতিক প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সম্ভাব্য রাষ্ট্রদূতের নামের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ভারতে এখন হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। ২০১৪ সাল থেকে তিনি চুক্তিতে দিল্লিতে হাইকমিশনার হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে প্রায় পাঁচ বছর সেখানে হাইকমিশনার ছিলেন সাবেক কূটনীতিক তারিক এ করিম। তাঁকেও সরকার চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছিল। আর ২০০৯ সাল থেকে মস্কোতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন ব্যবসায়ী সাইফুল হক। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র না থাকলেও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশোনা করা সাইফুল হক এক দশকের বেশি সময় ধরে মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আছেন। বাংলাদেশের কূটনীতিতে এতটা দীর্ঘ সময়জুড়ে কোনো ব্যক্তির একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের নজির নেই।
সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশের মিশনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সব দেশই করে থাকে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সাধারণত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ঘটনা কম। কাজটি বিশেষায়িত হওয়ায় একজন পেশাদার কূটনৈতিকের এখানে ভালো করার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বিদেশে বাংলাদেশের ১৫ মিশনে রদবদল ও নিয়োগ সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের শাসনামলে একসঙ্গে এত রদবদল ও নিয়োগের ঘটনা এটাই প্রথম। এই পরিবর্তনের একাধিক কারণ রয়েছে। যেমন: ভারত ও রাশিয়ায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন কাজ করছিলেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত তিন বছরের বেশি সময়জুড়ে একটি দেশে দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণত প্রতি তিন বছর পর একজন রাষ্ট্রদূতের পদে পরিবর্তন হয়ে থাকে। এ ছাড়া একাধিক দেশে রাষ্ট্রদূতের পদ খালি রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন ঢাকায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে মো. শহীদুল হকের স্থলাভিষিক্ত হবেন। ডিসেম্বরে শহীদুল হকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। নিউইয়র্কে মাসুদ বিন মোমেনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাবাব ফাতিমাকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর জাপানে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ। কুনমিংয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. তৌহিদ ইসলামকে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হচ্ছে নেদারল্যান্ডসে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফরকে সংযুক্ত আরব আমিরাত পাঠানো হচ্ছে। অস্ট্রিয়ায় রাষ্ট্রদূত পদে যোগ দেবেন ডেনমার্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল। ডেনমার্কে আবদুল মুহিতের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস। তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকীকে বদলি করা হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাব্বির আহমেদ চৌধুরী ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নেওয়ায় মিশনপ্রধানের পদটি খালি হয়েছে। আর তুরস্কে যাচ্ছেন উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসউদ মান্নান। ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির অধ্যক্ষ সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার উজবেকিস্তানে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।
এদিকে রিয়াদে বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলামকে বাহরাইনে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া জর্ডানে রাষ্ট্রদূতের পদে যোগ দিচ্ছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনু বিভাগের মহাপরিচালক নাহিদা সোবহান। মধ্যপ্রাচ্যের ওই দুই দেশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতেরা ফিরে আসায় মিশন দুটি খালি ছিল।
অন্যদিকে কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশহুদ আহমেদকে গ্রিসে এবং গ্রিস থেকে মো. জসিম উদ্দিনকে কাতারে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে আগামী বছরের জুনের দিকে জার্মানি, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, মিশর, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্তত ১০টি মিশনের প্রধানেরা অবসরে যাচ্ছেন। ফলে ওই সময়ে রাষ্ট্রদূত পদে আরেক দফা রদবদল ও নিয়োগ হতে পারে।
বিদেশে বিভিন্ন মিশনে রাষ্ট্রদূতের পদে পরিবর্তন আনার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্বাভাবিক নিয়মে এসব পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এসব নিয়োগ-বদলির বিষয়ে বেশ কিছুদিন থেকে প্রস্তুতি চলছিল।