যে বই বাজেয়াপ্ত হয়েছিল দুবার
প্রথমা প্রকাশনের ‘সমাজ ইতিহাস গ্রন্থমালা’ সিরিজের অন্তর্গত খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসের ভাসানী যখন ইউরোপে বইটি রচনার নেপথ্য পটভূমি সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রকাশক মতিউর রহমান যে বিবরণ পেশ করেছেন, তা সত্যিই বেশ আগ্রহসঞ্চারী। মওলানা ভাসানী তখন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর তাঁর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বার্লিনে অনুষ্ঠেয় শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে ইউরোপে যাত্রা করে। এই দলে এ বইয়ের লেখকও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। প্রতিনিধিদলটি লন্ডনে থাকতেই যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়। জারি করা হয় কুখ্যাত ৯২-ক ধারা। মওলানা ভাসানীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ওপর জারি করা হয় নিষেধাজ্ঞা। হুমকি দেওয়া হয় দেশে ফিরলে বিমানবন্দরেই তাঁকে গুলি করে মারা হবে।
এই হুমকির ঘটনাই মওলানা সম্পর্কে ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্যের সাংবাদিক মহলে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে। তাঁরা মওলানার সাক্ষাৎকারের পর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এসব সাক্ষাৎকারের ভেতর দিয়ে মওলানা ভাসানী তুলে ধরেন তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, জীবন-দর্শন ও তাঁর নিজস্ব বিশ্ববীক্ষা। এ বইয়ে এই সবকিছুর উল্লেখ আছে সবিস্তারে। বইটিতে উচ্চারিত কিছু সত্য কথনের অভিযোগে পাকিস্তানের সামরিক সরকার বইটিকে দু-দুবার বাজেয়াপ্ত করেছিল—একবার ১৯৫৮, আরেকবার ১৯৬৫ সালে। লেখকের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছিল হুলিয়া এবং দায়ের করা হয়েছিল মামলাও।
মওলানা ভাসানী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা শেষ পর্যন্ত বার্লিন শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি। লন্ডনের পাকিস্তান দূতাবাসের চরম বিরোধিতার ফলেই তা সম্ভব হয়নি। ফলে তাঁরা ইউরোপে দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকা পড়তে বাধ্য হন। এ বইয়ে তার সুন্দর বিবরণ আছে। স্মৃতিকথা এবং প্রায় উপন্যাসের ভঙ্গিতে লেখা ভাসানী যখন ইউরোপে এ দেশের একটি নির্দিষ্ট সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিলবিশেষ। বইটি পাওয়া যাবে বইমেলায় প্রথমার প্যাভিলিয়নে।