জলবায়ু সম্মেলন
যুগান্তকারী প্রতিশ্রুতি কতটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ
ঘোষণা, প্রতিশ্রুতি, চুক্তি এবং বাস্তবায়ন প্রতিটি শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। সম্মেলনে উপস্থিত সরকারপ্রধানদের প্রতিশ্রুতি আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না, সেই অপেক্ষায় মানুষ।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম অংশ তথা ‘নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন’ বা লিডারস সামিট শেষ হয়েছে। ২৬তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ–২৬) ২০০টি দেশের ১২০ জন রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। বেশ কয়েকটি উদ্যোগের ঘোষণা এসেছে। সম্মেলনের সভাপতি রাষ্ট্র এগুলোকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বা ‘ব্রেক থ্রু অ্যাজেন্ডা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইইউ এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশ এসব উদ্যোগে শামিল হয়েছে।
ব্রেক থ্রু অ্যাজেন্ডার মধ্যে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড়ের অবসান, মিথেনের বৈশ্বিক নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানো, মধ্য শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বব্যাপী নিট শূন্য কার্বন নিঃসরণ নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় পূর্ব প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা। দাবি করা হয়েছে, এর ফলে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যানবাহন, সবুজ ইস্পাত এবং টেকসই কৃষি উন্নয়নের সুফল পাওয়া যাবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আরও জানিয়েছেন, এ উদ্যোগসমূহ দুই কোটি নতুন কর্মসংস্থান এবং উদীয়মান ও উন্নত উভয় অর্থনীতিতে ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে।
১৯৯২ সালে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন থেকে চলমান কপ-২৬ পর্যন্ত সম্মেলনগুলোতে বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে অনেক উচ্চাভিলাষী বক্তব্য শোনা গেলেও যথেষ্ট পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এখনো মূল বিষয় তথা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত করা এবং কোনোক্রমেই ২ ডিগ্রির বাইরে যেতে না দেওয়ার অভীষ্ট অর্জিত হয়নি। এ পরিস্থিতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্বনেতাদের প্রতিশ্রুতিসমূহ চলমান দর–কষাকষিতে কতটুকু প্রভাব ফেলবে? বিশ্বমানবতার প্রাণের দাবি, আশাজাগানিয়া বাসযোগ্য পৃথিবীর পথনকশা তৈরি হবে, নাকি কথামালাই থেকে যাবে? বিশ্বনেতাদের প্রতিশ্রুতিসমূহের ব্যাখ্যা থেকে চলমান দর–কষাকষির গতিপথের ইঙ্গিতবাহী চিত্র পাওয়া যেতে পারে।
মিথেন নিঃসরণ কমানোই যথেষ্ট?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দূষণকারী গ্যাস মিথেন নিয়ন্ত্রণের জন্য ৯০টির বেশি দেশকে সঙ্গে নিয়ে এর বৈশ্বিক নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এ চুক্তির অধীনে রাশিয়া, চীন এবং ভারত অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই মিথেন নিঃসরণ কমানোকে ঘিরে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
প্রথমত, বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে মিথেন সর্বাধিক তাপমাত্রা বাড়ায়। কিন্তু কার্বন ডাই–অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে দীর্ঘদিন থেকে তাপমাত্রা বেশি বাড়ায়। ৩০ শতাংশ মিথেন নির্গমন কমানোর মাধ্যমে ০.১ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈষ্ণিক উষ্ণায়ন এড়ানো যেতে পারে। অথচ প্রতি দশকে কার্বন ডাই–অক্সাইড বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করছে। উষ্ণায়ন রোধে কার্বন ডাই–অক্সাইড কমানোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কোন উৎসের মিথেন নিঃসরণ কমানো হবে? প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রস্তাব কতটা জাতীয় স্বার্থনিরপেক্ষ? সম্প্রতি মার্কিন এনভায়নরমেন্ট প্রোটেকশন এজেন্সি মিথেন নিয়ে ওবামা যুগের নীতিমালাগুলোকে ফিরিয়ে এনেছে। তেল এবং গ্যাসক্ষেত্রের মিথেন কমানো হবে। সর্বোচ্চ মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হয় গবাদিপশু-পাখির বর্জ্য থেকে, প্রায় ৪৪ শতাংশ। মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভারত, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সর্বোচ্চ মিথেন নিঃসরণকারী। এদের উৎপাদনে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি।
জীবাশ্ম জ্বালানিতে শুভংকরী হিসাব?
গ্লাসগো সম্মেলনের প্রাক্কালে জি–৭ এবং জি–২০ উভয় বৈঠকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির নেতারা বিদেশে নতুন কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়ন বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক এবং পেনশন তহবিল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন সীমিত করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। দাতব্য সংস্থা ও উন্নয়ন ব্যাংকগুলো থেকে প্রাথমিক ১০ বিলিয়ন ডলার তহবিল নিয়ে ‘গ্লোবাল এনার্জি অ্যালায়েন্স ফর পিপল অ্যান্ড প্ল্যানে’–এর সূচনা হয়েছে। প্রায় ৪৫০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্লাসগো ফাইন্যান্সিয়াল অ্যালায়েন্স ফর নেট জিরোর অধীনে অঙ্গীকার করেছে। ব্যাংকগুলো সবুজায়নের পক্ষে এমন ঘোষণা দিলেও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান জীবাশ্ম জ্বালানিতে এখনো বিনিয়োগ বন্ধ করেনি।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর বৃহত্তম ৬০টি ব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানিতে ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করেছে। একইভাবে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক।
কোনো কোনো দেশ নিজেরা কয়লাভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদন বন্ধেরও ঘোষণা দেয়নি। যেমন চীন উৎপাদন বাড়িয়েছে। যুক্তরাজ্য উত্তর সাগরে জীবাশ্ম জ্বালানি অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য পাবলিক ল্যান্ড এবং অফশোরে নতুন ইজারা স্থগিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জার্মানি ২০৩৮ সালের মধ্যে কয়লা উৎপাদন বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর থেকে জি-২০ দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য ৩.৩ ট্রিলিয়ন ভর্তুকি দিয়েছে। বাংলাদেশও অর্থায়ন করে যাচ্ছে।
সম্মেলন চলাকালে রাষ্ট্রায়ত্তাধীন অগ্রণী ব্যাংক সম্প্রতি ২৫ বছর মেয়াদি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে মোট ৭ হাজার ৪৯৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উত্তাপ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি এড়ানোর ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে। এ জন্য ৮৯ শতাংশ কয়লা মজুত, ৫৮ শতাংশ তেলের মজুত এবং ৫৯ শতাংশ জীবাশ্ম মিথেনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বন উজাড় প্রতিরোধ সম্ভব হবে?
২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি ব্রেক থ্রু অ্যাজেন্ডার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। বিশ্বের প্রায় ৮৫ ভাগ বনভূমি অবস্থিত রয়েছে এমন দেশগুলো এ ঘোষণায় শামিল হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে কানাডা, ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, কঙ্গো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি। তবে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
এ ছাড়া বন উজাড় প্রতিরোধে ২৮টি দেশের সরকার কৃষিপণ্য যেমন পাম তেল, সয়া এবং কোকোর বৈশ্বিক বাণিজ্য থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে। আভিভা, শ্রোডারস, অ্যাক্সাসহ বিশ্বের ৩০টির বেশি বড় আর্থিক সংস্থাও বন উজাড়ের সঙ্গে যুক্ত ক্রিয়াকলাপে বিনিয়োগ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১৪ সালে বনভূমি রক্ষায় এ ধরনের উদ্যোগেরও বাস্তবায়ন বিশ্ব দেখেনি। কীভাবে এত বড় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হবে এবং এর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বন আসলেই রক্ষা করা হচ্ছে কি না; তা যাচাই বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রতিশ্রুতির অর্থ কি মিলবে?
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার রোধে এবং নেট শূন্যে পৌঁছানোর প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজন অর্থের। বিশাল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ ও কাঠামোগত রূপান্তরের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা কমিয়ে আনা যায়। ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়নি। জাতিসংঘ জানাচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বার্ষিক জলবায়ু অভিযোজনে ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। যদি প্রশমনের লক্ষ্যমাত্রা লঙ্ঘন করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। প্রথমে জাতিসংঘ নির্ধারিত মোট জাতীয় উৎপাদনের ০.৭ শতাংশ বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা দরকার। জলবায়ু তহবিলে প্রদত্ত অর্থ এ প্রতিশ্রুতির অতিরিক্ত হতে হবে।
জি-৭ দেশগুলো ২০২০ সালে ০.৭ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ করলে অতিরিক্ত ১৫৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যেত। সম্মেলন আয়োজনকারী দেশ যুক্তরাজ্যও তাদের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ০.৫ শতাংশ ধার্য করেছে। উন্নয়নশীল দেশসমূহকে ঋণ–ত্রাণ প্রদান ও ঋণ পুনর্গঠনকে জলবায়ু অ্যাজেন্ডায় দৃঢ়ভাবে রাখা উচিত। জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো দিয়ে এ উদ্যোগ শুরু করা যায়। কোভিড ১৯ মহামারি, জলবায়ু ও ঋণসংকটের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে আন্তর্জাতিক ঋণকাঠামোতে আরও পদ্ধতিগত সংস্কারের দিকে যেতে হবে। বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর অনুদানভিত্তিক জলবায়ু অভিযোজন তহবিলে অতিরিক্ত মূলধন প্রয়োজন। সবুজ বন্ড বাজার দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন বাড়াতে সাহায্য করার একটি উপায়। সবুজ বন্ড বাজারের জন্য নিয়ন্ত্রক কাঠামো এখনো দুর্বল এবং গ্রিনওয়াশিংয়ের সম্ভাবনা ব্যাপক। কিন্তু বেসরকারি অর্থায়ন বেশি প্রয়োজন, এমন দেশগুলোতে তা সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা ঐতিহাসিকভাবে ক্ষীণ। সেখানে সরকারি অর্থায়নই ভরসা। সে ক্ষেত্রে দূষণকারী প্রদানভিত্তিক করকাঠামো চালু করে অর্থ সংগ্রহ যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনসৃষ্ট ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় থেকে শুরু করে দাবানল, ঘন ঘন বন্যা, পাশাপাশি দাবদাহ এবং খরা বেড়েই চলেছে। লস অ্যান্ড ড্যামেজ অভিযোজনের থেকে ভিন্ন। মানুষের বাস্তুচ্যুতি, জীবিকা হারানো এবং জলবায়ু উদ্বাস্তু বা শরণার্থী ইত্যাদি লস অ্যান্ড ড্যামেজের অংশ। গত জলবায়ু সম্মেলনে নতুন সান্তিয়াগো নেটওয়ার্ক অন লস অ্যান্ড ড্যামেজ গঠিত হয়। কিন্তু সবুজ জলবায়ু তহবিলের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলার বাইরে অর্থায়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি শনাক্ত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের শুধু পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধার করতে নয়, ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করার জন্য শক্তিশালী, স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য লস অ্যান্ড ড্যামেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
নিট জিরো নিশ্চিত করার প্রত্যাশা?
রাষ্ট্রপ্রধানেরা চলে গেছেন। আলাপ-আলোচনা, দর–কষাকষি চলছে। সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলেনি। বলেছে তারা নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে ব্যাপকভাবে ঝুঁকবে।
প্যারিস চুক্তির ষষ্ঠ অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা সন্তোষজনক অবস্থায় পৌঁছানোর ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। এবারের সম্মেলনে এ অনুচ্ছেদভুক্ত বাজার ও অবাজারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টি শীর্ষস্থানীয় অ্যাজেন্ডা। কার্বন নির্গমনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারভিত্তিক পদ্ধতির প্রতিটি বিষয় নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে।
আন্তরাষ্ট্রীয় কার্বন ক্রেডিট (যেটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্থানান্তরিত প্রশমন ফলাফল বা আইটিএমওএস বলা হয়) নিয়ে তথা এর নিয়ম, পদ্ধতি, সর্বজনীন পরিমাপক, পরিবীক্ষণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বাইরে উন্নয়ন সহযোগিতার নন-মার্কেট বা অবাজার সহযোগিতার বাস্তবায়ন বিধানাবলি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে আলোচনা কত দূর এগোবে? পরবর্তী শুক্রবারের মধ্যে একটি দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে কি?
প্রতিশ্রুতি, চুক্তি ও বাস্তবায়ন
ঘোষণা, প্রতিশ্রুতি, চুক্তি এবং বাস্তবায়ন প্রতিটি শব্দ ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। সম্মেলনে উপস্থিত সরকারপ্রধানদের প্রতিশ্রুতিতে জনমানুষ আবেগাপ্লুত হয়। গ্রিনহাউস গ্যাসের ভয়াল থাবা থেকে পৃথিবীর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা অধিকাংশের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা। প্রশমন, অভিযোজন, প্রযুক্তি, অর্থায়ন এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজের বাস্তববাদী, গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রনিরপেক্ষ জনকেন্দ্রিক ন্যায্য পথনকশার ওপরই নির্ভর করবে এ সম্মেলনের সফলতা।
● অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এবং ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’–এর চেয়ারপারসন। আইইউসিএন এশিয়া আঞ্চলিক মেম্বার্স কমিটির ভাইস চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন