মুরগি ও মাছের খাবারে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য

খামারে মুরগি ও মাছের খাবারে (ফিড) পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত ট্যানারির বর্জ্য। চামড়ার বর্জ্যে আছে অত্যন্ত ক্ষতিকর উপাদান। এসব বর্জ্য দিয়ে মাছ ও মুরগির খাবার তৈরি হচ্ছে, তাতে মাছ ও মুরগির শরীর বিষাক্ত হচ্ছে। অথচ এসব মাছ ও মুরগি মানুষ দৈনন্দিন গ্রহণ করছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর।
রাজধানীতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আজ বুধবার সকালে ‘পোলট্রি ফিডে বিষাক্ত ট্যানারি বর্জ্য; গভীর সংকটে জনস্বাস্থ্য! মুক্তির উপায় কী!’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক জাহেদুর রহমান। তিনি বলেন, চামড়ার বর্জ্য থেকে মাছ-মুরগির খাবার তৈরির এই অপকর্ম আগে হাজারীবাগে হতো। এখন তা সাভারের ভাকুর্তার মোগরাকান্দির চকে হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এই অনৈতিক কাজের জন্য মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। চামড়ার বর্জ্য থেকে পোলট্রির খাবার তৈরির এই প্রক্রিয়াটি এতটাই ভয়াবহ, চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস হবে না।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের মিডিয়া অ্যাডভোকেসি কর্মকর্তা সৈয়দ সাইফুল আলম সম্প্রতি সাভারের ভাকুর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার ছবি তোলেন। তিনি সভায় বলেন, ভাকুর্তার মোগরাকান্দি গ্রামে ২০টি কারখানা থেকে পোলট্রি মুরগির বিষাক্ত ফিড তৈরি হচ্ছে।
আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফুড সেফটি নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মহিদুল হক খান বলেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও আইন না মেনে দেদার ট্যানারি বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে মাছ ও মুরগির খাবার। তাহলে আমরা কী বাচ্চাদের হাতে ধরে বিষ খাওয়াচ্ছি? সরকারের এ বিষয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
নির্ধারিত আলোচক বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম আবদুল মমিন বলেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ২০ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভারী ধাতু ক্রোমিয়াম, সালফিউরিক অ্যাসিড, সোডিয়াম, ক্লোরাইড সালফেট, অ্যালুমিনিয়াম সালফেট, ফর্মালডিহাইড, ক্লোরাইড। এগুলো মাটিও হজম করতে পারে না। অথচ এগুলো মানবশরীরে প্রবেশ করছে।
আরেক আলোচক পশুসম্পদ ও পোলট্রি বিশেষজ্ঞ বিধান চন্দ্র দাস বলেন, প্রাণিজ আমিষের বেশির ভাগটাই তো আসে ডিম আর পোলট্রি মুরগি থেকে। খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে তো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানবশরীরে প্রবেশ করছে। এটা জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি।
সভায় ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী, বাপার যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।