ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরোনো মন্দির

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ছাত্রাবট গ্রামে দামোদর বিগ্রহ দেবতা মন্দিরের এক একর ৩৩ শতক জমি বেহাত হয়ে গেছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ওই জমিতে স্থাপিত ৫০০ বছরের পুরোনো মন্দিরটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। গত শনিবার রাতে এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা হয়েছে।মামলার এজাহারে জানা যায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোর পাঁচটা থেকে সকাল ১০টার মধ্যে মির্জাপুর ইউনিয়নের শহরশ্রী গ্রামের মো. সুফি মিয়া ও ছুবহান মিয়া, ছাত্রাবট গ্রামের জাপান মিয়া ও লুতু মিয়ার নেতৃত্বে ১৫-১৬ জনের একটি দল প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো মন্দিরটি ভেঙে ফেলেন।মন্দিরের পুরো জমি মো. সুফি মিয়ার দখলে রয়েছে। তিনি বিএনপি মির্জাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি। তাঁর দাবি, তিনি ক্রয়সূত্রে এ জমির মালিক।শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, মন্দিরটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। শুধু ভিটাটি অবশিষ্ট রয়েছে। চুন-সুরকির তৈরি এ মন্দিরের ইট দিয়ে সীমানাপ্রাচীরে ব্যবহারের জন্য কংক্রিট তৈরি করা হচ্ছে।জমির কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ছাত্রাবট মৌজার ৭৩ নম্বর খতিয়ানে ১০০০ নম্বর দাগে এক একর ৩৩ শতক জমির মধ্যে দুই শতকে দামোদর বিগ্রহ দেবতার মন্দির, ৬৭ শতক জমিতে একটি পুকুর, ৪২ শতক জমিতে ছিল গোপাট এবং অবশিষ্ট জমিটি ছিল এর প্রাঙ্গণ। সর্বশেষ ২০০০ সালের মাঠ জরিপের সরবরাহ করা জমির তসদিককৃত কাগজেও (পরচা) দেখা যায়, জমিটি দামোদর বিগ্রহ দেবতা মন্দিরের নামেই রয়েছে। এতে উল্লেখ আছে, মন্দিরটি এলাকার হিন্দু জনসাধারণের ব্যবহার্য। পরচায় মন্দিরের সেবায়েত হিসেবে নাম রয়েছে রণজিত্ শর্মা চৌধুরীর। রণজিত্ শর্মা চৌধুরী রামশঙ্কর শর্মা চৌধুরীর বংশধর।এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. সুফি মিয়া বলেন, ১৯৭৫ সালে তাঁর বাবা প্রয়াত মো. লিচু মিয়া ৪০ হাজার টাকায় জমিটি তিন ভাই মৃত মো. আবদুল মন্নান, মো. সুফি মিয়া ও মো. দুলাল মিয়ার নামে ক্রয় করেন। জমিটি বিক্রি করেন রমেন্দ্র নারায়ণ শর্মা চৌধুরী, রতিশ রঞ্জন শর্মা চৌধুরী, রসময় শর্মা চৌধুরী, রণজিত্ শর্মা চৌধুরী ও অরবিন্দ শর্মা চৌধুরী। বাবার মৃত্যুর পর তিনি গত সাত-আট বছরে ওই জমিতে মাছের খামার গড়েছেন। কেউ কোনো আপত্তি করেনি। ভগ্ন মন্দিরটি ভাঙার পর এলাকার কিছু লোক (কারও নাম উল্লেখ না করে) তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে তিনি দাবি করেন।রামশঙ্কর শর্মা চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে একমাত্র রণজিত্ শর্মা চৌধুরী ও তাঁর পরিবার ছাত্রাবট গ্রামে রয়েছেন।রণজিত্ শর্মা চৌধুরী বলেন, মন্দিরের সেবায়েত হিসেবে কাগজপত্রেই শুধু তাঁর নাম রয়েছে। এটি প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে স্বাধীনতার পরপরই। মায়ের চাকরিসূত্রে তখন তাঁরা বড়লেখা উপজেলার পাল্লাথল চা-বাগানে থাকতেন।সুফি মিয়ার জমি ক্রয়ের দাবি প্রসঙ্গে রণজিত্ শর্মা চৌধুরী বলেন, ‘আমি মন্দিরের কোনো জমি কারও কাছে বিক্রি করিনি।’পূজা উদ্যাপন পরিষদ মির্জাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি করুণাময় দেব ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দাশ বলেন, মন্দির ভাঙার খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। জমিটি দামোদর বিগ্রহ দেবতার নামে রয়েছে এটা তাঁরা জানতেন না।পূজা উদ্যাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সভাপতি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। মন্দিরের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছেন।’মৌলভীবাজার জেলার সরকারি কৌঁসুলি এ এস এম আজাদুর রহমান বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য নয়। যদি এ ধরনের সম্পত্তি কোনো কারণে রেজিস্ট্রি হয়েও থাকে, তবে ওই রেজিস্ট্রি দলিল আইনের চোখে অবৈধ।শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ বলেন, পূজা উদ্যাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল শাখার সাধারণ সম্পাদক জহর তরপদার শনিবার রাত ১১টায় থানায় এজাহার করেছেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।