পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেছেন, ভুটানই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর একটি তারবার্তার মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
পররাষ্ট্রসচিব গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিন দিনের সফর শেষে গতকাল বিকেলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদায় জানানোর পর এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শেরিং তোবগের এ সফরের সময় ভারত না ভুটান—কে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। কারও মতে, ভুটান ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আবার কারও মতে, ভারত ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এর এক দিন পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভুটান।
এ ব্যাপারে সব ধরনের বিভ্রান্তি পাশ কাটিয়ে শহীদুল হক বলেন, ভুটান ও ভারত দুই দেশই বাংলাদেশকে ৬ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে ভারতের কয়েক ঘণ্টা আগে ভুটান স্বীকৃতি দিয়ে তারবার্তা পাঠায়।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের আগে একান্ত আলাপের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশকে দেওয়া ভুটানের স্বীকৃতির তারবার্তাটি তুলে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে।
একাত্তরের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের ওই তারবার্তায় দেশটির তৎকালীন রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিলেন, বিদেশি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের মহান এবং বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম অদূর ভবিষ্যতে সাফল্য লাভ করবে। ভুটানের জনগণ এবং তাঁর প্রত্যাশা, সৃষ্টিকর্তা বর্তমান বিপদ থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করবেন, যেন তিনি দেশের পুনর্গঠন এবং উন্নয়নের মহান কর্তব্যে দেশ ও দেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
একান্ত আলাপ শেষে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুটান সব সময় আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। কেননা, প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।’ মূলত ওই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই শেখ হাসিনা ৬ ডিসেম্বরকে বাংলাদেশে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির জন্য বেছে নেন।
বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ কেনা, আমদানি এবং ভুটানের নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মতি জানান।
বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি ও এর প্রটোকল (১০ বছরের জন্য নবায়নকৃত) এবং ঢাকায় ভুটানের দূতাবাস নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দসংক্রান্ত চুক্তি সই হয়।