২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পদ্মা সেতু ১৫ জুনের মধ্যে পুরো প্রস্তুত হবে

সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, মে পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ শতাংশ।

উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’। সম্প্রতি জাজিরা প্রান্তে।
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য যা দরকার, এর প্রায় সব কাজই সম্পন্ন হওয়ার পথে। এখন যেসব কাজ চলমান আছে, এর বেশির ভাগই যানবাহন চলাচলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ নেই। তবে বাকি টুকটাক কাজ ১৫ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রতি মাসে প্রতিবেদন তৈরি করে সেতু বিভাগ। সর্বশেষ গতকাল বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, মে পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ শতাংশ। বাকি ১ শতাংশ কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে সেতুতে যানবাহন চলাচলের পথে সাইন–সংকেত ও পথনির্দেশক (রোড মার্কিং) চিহ্ন দেওয়ার কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ১০ জুনের মধ্যে এই কাজও শেষ হবে। সড়কবাতি (ল্যাম্পপোস্ট) স্থাপনের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। এখন শুধু বাতি জ্বালাতে বৈদ্যুতিক সংযোগসহ শেষ মুহূর্তের আনুষঙ্গিক কাজ চলছে। এ সপ্তাহের মধ্যে এই কাজও শেষ করে জুনের মাঝামাঝি সেতুতে বাতি জ্বালানোর পরিকল্পনা আছে। সেতুর কংক্রিটের দেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানোর কাজ চলমান আছে। কাজটি অনেক আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জাহাজে রেলিংয়ের সরঞ্জাম আসতে দেরি হয়েছে। এই কাজও ১৫ জুনের মধ্যে শেষ করতে চান প্রকল্প কর্মকর্তারা।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সেতুতে টুকিটাকি কাজ চলছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে, ১৫ জুনের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হবে। তিনি বলেন, ২৫ জুন সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে যত ধরনের প্রস্তুতি দরকার, তার সবই নেওয়া হচ্ছে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূত্র জানায়, রেললাইনের পাশে গ্যাসলাইন বসানোর কাজ সামান্য বাকি রয়েছে। সেতুর দুই কিলোমিটার ভাটিতে ৪০০ কেভি বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের ভিত্তি নির্মাণও মূল সেতুর কাজের অংশ। এই কাজও কিছুটা বাকি আছে। তবে এসব কাজ যানবাহন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত নয়।

মূল সেতুর কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। তাদের সঙ্গে চুক্তি ছিল ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকায়। মে পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।

মে পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি–সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, নদীশাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৯৩ শতাংশ। এই কাজের ঠিকাদার চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকায়। এর মধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।

এর বাইরে দুই পাড়ে সংযোগ সড়ক, টোলপ্লাজা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ ২০১৮ সালেই শেষ হয়েছে। এসব কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণকাজের তদারকে পরামর্শক ও নিরাপত্তাকাজে ২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। মে পর্যন্ত সার্বিক ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসারে, চলতি জুন মাসে ঠিকাদারদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এরপর আরও এক বছর প্রকল্পের মেয়াদ থাকবে। এ সময় কোনো কাজ বাকি থাকলে তা সম্পন্ন করা হবে, ঠিকাদারদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং সেতুতে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তা ঠিকাদার সারিয়ে দেবে।

সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব (ডিপিপি) আরেক দফা সংশোধন করতে হবে। কারণ, শেষ পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় বাড়লে তা সংযোজন করতে হবে। চলতি মাসে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের কথা ছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, ঠিকাদারের কাজের বিল দেওয়া হয় পণ্যের বর্তমান বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে। আর সময় সময় এই বাজারমূল্য তালিকা প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তবে বিবিএসের সর্বশেষ বুলেটিন গত বছরের শেষের দিকে প্রকাশ করা হয়েছে। এ অবস্থায় পদ্মা সেতুর ঠিকাদারের জমা দেওয়া বিলের পাওনা কত হবে, তা নির্ধারণ করতে পারছে না সেতু বিভাগ। এ জন্য পদ্মা সেতু প্রকল্পের চূড়ান্ত ব্যয় প্রস্তাব সংশোধনের বিষয়টি আটকে আছে।