ঢাকায় বছরে ৬৬ হাজার মানুষকে কুকুরে কামড়ায়

কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে ৬৬ হাজার ২০৪ জন মানুষ জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের সেবা নিয়েছে। তিন বছরের মধ্যে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। এর মধ্যে শুধু গত ডিসেম্বরেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ও এ মাসের প্রথম ১৭ দিনে ২ হাজার ৬৭৮ জনকে কুকুর কামড় দিয়েছে। জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ইঁদুর ও খরগোশ ছাড়া যেকোনো বন্য প্রাণীই ‘র্যা বিস ভাইরাস’ নামের একটি ভাইরাসের বাহক। বাংলাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পাগলা কুকুরের কামড় থেকে রোগটি ছড়ায়। একবার সংক্রমিত হলে বাঁচার কেনো সম্ভাবনা থাকে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি হলো ‘শতভাগ প্রাণঘাতী’ রোগ। জলাতঙ্কে প্রাণহানির সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে।
জানা গেছে, কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় কুকুরের কামড়ে বহু মানুষ আহত হচ্ছে। ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২০১৩ সালে চিকিৎসা নিয়েছে ৪৫ হাজার ৩১৩ জন, ২০১৪ সালে ৫৮ হাজার ৯৫০ জন ও গত বছর নিয়েছে ৬৬ হাজার ২০৪ জন। পুরো দেশের চিত্রই এক। দেশে ২০১৩ সালে ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪৩ জন, ২০১৪ সালে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৭ জন ও ২০১৫ সালে আহত হয়েছে ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৬২ জন।
গতকাল বুধবার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আধঘণ্টায় কুকুরের কামড়ে আহত পাঁচটি শিশুকে আসতে দেখা যায়। সাভারের নবীনগর থেকে আসা এক নারী ইয়াসমিন বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুই ছেলে রিয়াদ আর রিয়ান। বাড়ির সামনেই খেলতেছিল। প্রচুর কুকুর। কামড়ায়ে কী করছে দেখেন।’ শিশু দুটি তাদের স্বজনের কোলে ছিল। একটির চোখের ঠিক নিচে আর অন্যটির পা থেকে তখনো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি কলোনি থেকে এসেছিল ১১ বছরের রুবেল। রুবেলের ফুপু রানু বেগম জানান, দুই ভাইবোন দোকানে গিয়েছিল। ছোট বোন সুমাইয়ার ধাক্কায় রুবেল কুকুরের গায়ে পড়ে যায়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে কামড় দেয় কুকুর। প্রত্যেক শিশুর স্বজনের অভিযোগ, তাঁদের এলাকায় কুকুরের সংখ্যা অনেক বেশি।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আঞ্জুমান আরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘র্যা বিস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া কুকুর কামড়ালে জলাতঙ্ক হয় না। কিন্তু কোন কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া আছে, সেটা নিশ্চিত হব কীভাবে? তাই আমরা কুকুর কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি বলে মনে করছি। নইলে জলাতঙ্ক ও ধনুষ্টঙ্কার হতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলেন, কুকুর কামড় বা আঁচড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পানি ও কাপড় ধোয়ার সাবান দিয়ে ভালোভাবে ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তাঁরা আরও বলেন, জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর ক্ষতস্থানে ব্যথা হবে ও ঝিমঝিম করবে, জ্বর জ্বর লাগবে, পানি দেখলে বা পানি খেতে ভয় লাগবে, বাতাস ও আলো সহ্য হবে না, শ্বাসকষ্ট হবে এবং শেষ পর্যায়ে শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং মারা যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কুকুরের শরীরে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দিয়ে এবং লাইগেশন ও খোজাকরণের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার কথা। কিন্তু দেশের ৬৪টি জেলার সদর পৌরসভাগুলোয় শুধু টিকা দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে।