২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র কৃতিত্ব ভোলার মতো নয়

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

বাংলা ভাষার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অস্তিত্ব রক্ষায় যে মহৎ প্রাণের অধিকারী ব্যক্তিরা জীবনের অধিকাংশ সময়ই ব্যয় করেছেন এবং অসামান্য অবদান রেখেছেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আট দশক বয়সের জীবনে বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদান এবং কর্মপরিধি গণনা করে শেষ করা যাবে না।

একাধারে শিক্ষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী, গবেষক, আইনজীবী, অনুবাদক, কবি, সাহিত্যিক, লোকবিজ্ঞানী, দার্শনিক, জ্ঞানতাপস ও ভাষাসৈনিক হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌। বিশেষ করে, তাঁর উদার মনোভাবের জন্য সব ধর্মের মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন। ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙালি’, তাঁর এ বাণীই প্রমাণ করে যে বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর কত ভালোবাসা এবং তিনি কতটা মহৎ, দেশপ্রেমিক ও অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব।

জীবদ্দশায় ইংরেজি, লাতিন, আরবি, উর্দু, ফারসি, জার্মানি, ফরাসি, হিব্রু, গ্রিক, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, সিংহলি, সিন্ধিসহ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন। তন্মধ্যে ১৮টি ভাষাতেই অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল এবং সেই ভাষাগুলোতে তিনি অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারতেন। আর বলা যায়, বাংলা ভাষার একধরনের পোস্টমর্টেমই তাঁর দ্বারাই হয়েছে। কোটি বাঙালির প্রাণের স্পন্দন এই বাংলা ভাষায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র কৃতিত্ব যেন ভোলার মতো নয়।

চলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া নামে পরিচিত এই মহান মনীষীর জন্ম ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার পেয়ারা গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন মধ্যযুগীয় পীর গোরাচাঁদের দরবার শরিফের খাদেম। আর মাতা হুরুন্নেসা। তিনিই ড. শহীদল্লাহ্‌র প্রথম নাম মোহাম্মদ ইব্রাহিম থেকে বদলে রাখেন শহীদুল্লাহ্‌। কারণ তাঁর ধারণা হলো যে শহীদে কারবালার চাঁদে তাঁর ছেলে গর্ভে এসেছে, এ জন্য নাম শহীদুল্লাহ্‌ রাখলেই ভালো হবে।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন গ্রামের এক মক্তব থেকে। তিনি মীর মশাররফ হোসেনসহ বেশ কিছু লেখকের শিশুপাঠ্য বইসমূহ মক্তবেই পড়েছিলেন। মক্তবের বাইরে অন্যান্য শিক্ষা তিনি প্রাপ্ত বয়সে শুরু করেছিলেন।

মক্তবের পড়া শেষ করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হাওড়া জিলা স্কুলে ভর্তি হন। তখন থেকেই তাঁর ভাষা শেখার আকাঙ্ক্ষা জন্মে। স্কুলে থাকতেই তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি ও উড়িয়া শিখেছিলেন। এমনকি গ্রিক ভাষাও শেখা শুরু করেছিলেন। মূলত ভাষা শেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তাঁর স্কুলের শিক্ষক, আচার্য হরিনাথ দের কাছ থেকে।

১৯০৪ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হাওড়া জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯০৬ সালে এফ এ পাস করেন। ১৯১০ সালে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। উল্লেখ্য, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত নিয়ে এমএ ডিগ্রি করতে চাইলে ওই বিভাগের এক অধ্যাপক মুসলিম ছাত্রকে সংস্কৃত পড়াতে অস্বীকার করেন। এ জন্য একধরনের বাধ্য হয়েই তিনি ভাষাতত্ত্ব নিয়েই পড়ার চিন্তা করেন।

১৯১৩ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার বৃদ্ধি পেলে স্বাস্থ্যজনিত কাগজপত্রের জন্য তাঁর আর বিদেশে যাওয়া হয় না। ১৯১৪ সালে বি এল পাস করে, ১৯১৫ সালে তিনি সীতাকুণ্ড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১১ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব, ১৯১৭ সালে নির্বাচিত সভাপতি ও শেষমেশ ১৯২১ সাল পর্যন্ত যুগ্ম সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯১৫ সালের পর নিজ এলাকায় আইন ব্যবসা শুরু করলে অল্প সময়েই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন শহীদুল্লাহ্‌।

১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে একটি গবেষণার কাজ করেন এবং এ সময় বাংলা ভাষার ইতিহাস নিয়ে লেখা তাঁর কিছু প্রবন্ধ একটি জার্নালে প্রকাশিত হলে শিক্ষিত সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখার্জিও সেগুলো দেখে অনেক সন্তুষ্ট হন এবং শহীদুল্লাহ্‌কে উৎসাহ দেন। এ জন্যই ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থটি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ তাঁকেই উৎসর্গ করেছেন।

১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার শুরুতেই তিনি এখানে সংস্কৃত ও বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। পাশাপাশি তিনি দুই বছর আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতার দায়িত্বও পালন করেছেন। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় অতিবাহিত হয়েছে। এখানে শিক্ষাদানকালে তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি নিয়ে মৌলিক গবেষণা করেন এবং ১৯২৫ সালেই প্রমাণ করেন যে বাংলা ভাষার উৎপত্তি গৌড়ী বা মাগধী প্রাকৃত থেকে।

১৯২৬ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ফ্রান্সে গমন করেন এবং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত, বৈদিক ও প্রাকৃত ভাষার ওপর পড়াশোনা করেন এবং জার্মানির ফ্রাইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়েছেন তিনি। পরবর্তীকালে সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। ওই বছরই ধ্বনিতত্ত্বে গবেষণার জন্য প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে, দেশে ফিরে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। সংস্কৃত ও বাংলা ভেঙে আলাদা আলাদা বিভাগ হলে ১৯৩৭ সালে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৪ সালে অবসর নেন।

অবসর গ্রহণের পরেই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯৪৮ সালে তিনি আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হন এবং বিভাগীয় প্রধান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (ফার্সি ভাষার) খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। তা ছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে তিন বছর অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৭ সালে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ শুধু শিক্ষকতার মাধ্যমেই জীবন অতিবাহিত করেননি, বরং বহুমুখী ও নানা কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে সর্বদা যুক্ত রেখেছেন। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, করাচি উন্নয়ন সংস্থার ‘উর্দু উন্নয়ন প্রকল্প’, বাংলা একাডেমির ‘পূর্ব পাকিস্তানী ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্প’ ও ইসলামী বিশ্বকোষ প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি ১৯২১ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক, ১৯৪০ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট, ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ইসলামিক একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য, বাংলা একাডেমির বাংলা পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি, আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও দাউদ সাহিত্য পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তা ছাড়া তিনি ১৯২৬ সালে ঢাকায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ সম্মেলন, ১৯২৮ সালে কলকাতায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম সাহিত্য সমাজ সম্মেলন, ১৯৪১ সালে হায়দরাবাদে নিখিল ভারত প্রাচ্য বিদ্যা সম্মেলন ও ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সম্মানিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র সম্পাদনায় বহু পত্রিকা তাদের লেখনী প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে আল-ইসলাম পত্রিকা, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, আঙ্গুর, দি পীস, তকবীর (পাক্ষিক পত্রিকা) ও বঙ্গভূমি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র গবেষণামূলক গ্রন্থ ও প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৪০। তিনি ৪১টি পাঠ্যবইও লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যের ওপর তাঁর লিখিত প্রবন্ধ রয়েছে ৬০টির বেশি। ভাষাতত্ত্বের ওপর তাঁর ৩৭টি রচনা রয়েছে। তা ছাড়া তিনি ৩টি ছোটগল্প এবং ২৯টি কবিতাও লিখেছিলেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অসামান্য কাজ করেছিলেন সেটি হলো, বাংলা একাডেমি থেকে আঞ্চলিক ভাষার অভিধান বের করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা। রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম, অমিয় শতক ও দীওয়ানে হাফিজসহ তাঁর ১১টি অনুবাদগ্রন্থ রয়েছে। তাঁর লিখিত বিখ্যাত তিনটি শিশুতোষ গ্রন্থ রয়েছে। আর ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও বাংলা সাহিত্যের কথা (দ্বিতীয় খণ্ড) ইত্যাদি।

সারা জীবনের অসাধারণ সব কৃতিত্বের জন্য ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ পেয়েছেন অসংখ্য উপাধি, পদক ও পুরস্কার। এগুলোর মধ্যে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক প্রদানকৃত ‘নাইট অব দ্য অর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ উপাধি, ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ কর্তৃক ‘বিদ্যাবাচস্পতি’ উপাধি, ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স পদক’ (১৯৫৮), মরণোত্তর ‘হেলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মরণোত্তর ‘ডি লিট’ উপাধি, ১৯৮০ সালে মরণোত্তর ‘স্বাধীনতা পদক’ উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল তাঁকে সম্মানিত ফেলো হিসেবে মনোনীত করলে পাকিস্তান সরকারের অনুমতি না থাকায় তিনি তা গ্রহণ করেননি।

পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানে পশতু, পাঞ্জাবি, বেলুচি ও সিন্ধি ভাষা থাকা সত্ত্বেও এবং পুরো পাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও পাকিস্তানি শাসকেরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানালে, প্রথম ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে কঠোর প্রতিবাদ করেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সেমিনার ও সভা-সম্মেলনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে আহতদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ড. শহীদুল্লাহ্‌ অনেক ব্যথিত হৃদয়ে সমবেদনা জানিয়েছিলেন এবং তাঁর কালো আচকান কেটে বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশে একটি রাষ্ট্রভাষা হলে সে সম্মান বাংলার, দুটি রাষ্ট্রভাষা হলে বাংলার সঙ্গে উর্দুর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।’ এভাবে তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

প্রতিটি ভাষার প্রতিই তাঁর ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। বিশেষ করে, মাতৃভাষা বাংলার প্রতি। এ জন্যই তিনি বলেছিলেন, ‘যে জাতি তার ভাষাকে শ্রদ্ধা করে না, সে জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়।’ ১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই এই মহান মনীষী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। শহীদুল্লাহ্ হলের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। ভাষার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁর সম্মানার্থে, ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ হল।

২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে?’ এই বিষয়ের ওপর শ্রোতা জরিপের আয়োজন করেছিল। দীর্ঘ ৩০ দিনের চালানো শ্রোতা জরিপে ২০ জন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিদের মধ্যে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি পান।

* শিক্ষার্থী: শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়