জোসেফের সাজা মাফের আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে
![তোফায়েল আহমেদ জোসেফ](https://images.prothomalo.com/prothomalo%2Fimport%2Fmedia%2F2016%2F06%2F28%2F2019e27dacd28ea7ebbe18767538bc16-Untitled-3.jpg?auto=format%2Ccompress)
দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফের সাজা মওকুফের আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সাজা মওকুফের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়ে আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা ওই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ আবেদন পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত পেলেই তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
কোন বিবেচনায় আইন মন্ত্রণালয় সাজা মওকুফের বিষয়ে মতামত দেয়—জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সার্বিক বিবেচনায় এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জোসেফ অসুস্থ এবং হৃদ্রোগের সমস্যায় ভুগছেন।
দুই সপ্তাহ ধরেই জোসেফের সাজা মওকুফের তোড়জোড় শুরু হয়। বহুল আলোচিত এই সন্ত্রাসীর খুনের দায়ে প্রথমে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। এই রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল শুনানি শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কারা সূত্রের হিসাব অনুযায়ী, তাঁর সাজা ভোগ করা বাকি আছে আরও ২১ বছর ৭ মাস। জরিমানা না দিলে আরও এক বছর বেশি সাজা খাটতে হবে।
কারা সূত্র জানায়, জোসেফের মা রেনুজা বেগম ৭ জুন তাঁর সন্তানের সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করেন। তাঁকে অন্যায়ভাবে সাজা খাটানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। এখন দ্রুত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠাতে বিশেষ তদবির চলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে এই সাজা মওকুফের আবেদন অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়াটি চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেব। মতামত পেলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের কাছে যে কেউ ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে পারেন। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে বিধি মোতাবেক সেই আবেদন পৌঁছে দেব। সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমা করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। তিনিই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’
নব্বইয়ের দশকের শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ প্রায় ১০ মাস ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে রয়েছেন। কারা সূত্র জানায়, সাজাপ্রাপ্ত এই কয়েদির বয়স ৪২ বছর। কারা বিবরণ অনুযায়ী, জোসেফ মোট সাজা খেটেছেন ১২ বছর ১৭ দিন এবং সাজা মওকুফ (রেয়াত) পেয়েছেন ৯ মাস ১৪ দিন। তাঁর সম্ভাব্য মুক্তির তারিখ জরিমানা দিলে ২০৩৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। আর জরিমানা না দিলে ২০৩৯ সালের ২৪ জানুয়ারি।
১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি এই জোসেফ। ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার অন্যতম আসামি জোসেফ ও মাসুদ জমাদারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন এবং অন্য তিন আসামি আনিস আহমেদ, হারিস আহমেদ ও কাবিল সরকারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন জোসেফ, মাসুদ ও কাবিল। আসামি আনিস ও হারিস পলাতক থাকায় তাঁরা আপিল করতে পারেননি। ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের রায়ে জোসেফ ও কাবিলের সাজা বহাল থাকে এবং মাসুদ খালাস পান। এ ছাড়া অস্ত্র মামলায় জোসেফসহ অন্য আসামিদের ১২ বছর ও ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: