২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন পেতে এখনই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিতে হবে

নির্বাচন কমিশন ভবন
ফাইল ছবি

সংবিধানের আলোকে ‘আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে’ পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, আকবর আলি খান ও রাশেদা কে চৌধূরী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনসহ বিভিন্ন পেশার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি রয়েছেন।

বিবৃতিদাতারা বলেছেন, বিগত দুই নির্বাচন কমিশনের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আচরণের কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থায় মানুষের আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফেরাতে নির্বাচন কমিশন এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এ জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার খুঁজে বের করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অনুসন্ধান কমিটিকে হতে হবে দলনিরপেক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।

আজ শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেছেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’

বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ‘আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে’ নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের নির্দেশনা থাকলেও গত ৫০ বছরে কোনো সরকারই এমন একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

গত দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে দুটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ‘অ্যাডহক ভিত্তিতে সৃষ্ট ওই দুটি অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশে গঠিত রকিবউদ্দিন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন তাঁদের চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ওপর ব্যাপক অনাস্থা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তীব্র শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।’

বর্তমান নূরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের উদ্যোগ এখনই শুরু করতে হবে, যার প্রাথমিক পদক্ষেপ হবে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা।

এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা। তাঁরা বলেছেন, এই আইন প্রণয়ন করতে হবে, যাতে নির্বাচন কমিশন ‘স্বাধীনভাবে ও সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত’ থেকে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধরনের আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে নির্বাচনকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে বিষয়ে সংস্কার পদক্ষেপের কথা এখন থেকে ভাবতে অনুরোধ জানান তাঁরা।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করতে ও একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান রাখতে হবে। এই অনুসন্ধান কমিটি দলনিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হতে হবে, যাতে সব নির্বাচনী অংশীজনের কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পায়। গঠিত অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব হবে, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আইনে বিধৃত যোগ্যতার মানদণ্ডের আলোকে কিছু সৎ, নির্দলীয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের একটি প্যানেল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা। স্বচ্ছতার অংশ হিসেবে কোন কোন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটি প্রাথমিকভাবে বিবেচনা করছে, তাঁদের নাম প্রকাশ ও গণশুনানির আয়োজন করা এবং কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণের জন্য সেসব নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে, তার একটি প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার বিধান আইনে রাখতে হবে।’

নাগরিকেরা আশা করেন যে ‘সঠিক ব্যক্তিদের’ নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করবে। নাগরিক হিসেবে মতামত প্রদানের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন বিবৃতি প্রদানকারীরা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী অন্য নাগরিকেরা হলেন মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর পারভীন হাসান, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ,

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও শাহদীন মালিক, ফেমার সাবেক সভাপতি মুনিরা খান, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, একশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সি আর আবরার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, লেখক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের গবেষক অধ্যাপক স্বপন আদনান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও শাহনাজ হুদা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোনোয়ার কামাল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, আর্টিকেল ১৯-এর আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর আবদুল আলিম, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন ও মানবাধিকার আইনজীবী ফস্টিনা পেরেইরা।