ঐশীর সাজা কমানোর পাঁচ কারণ

রাজধানীর চামেলীবাগে স্ত্রীসহ পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান হত্যা মামলায় তাঁদের মেয়ে ঐশী রহমানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ঐশীর সাজা কমানোর ক্ষেত্রে পাঁচটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।

রায়ে বলা হয়েছে, সে (ঐশী) অস্বস্তিবোধ করছিল। তদন্তের সময় যখন তাকে (ঐশী) কোনো এক ব্যক্তি খারাপ উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলেছিল, সে কারণে ঐশী আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল।

বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৫ জুন রায় ঘোষণা করেন। ঐশীর সাজা সংশোধন করে ডেথরেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) নাকচ এবং ঐশীর আপিল ও জেল আপিল খারিজ করে ওই রায় দেওয়া হয়।

ঐশীর আইনজীবী সুজিত চাটার্জি বাপ্পী প্রথম আলোকে বলেন, রায় প্রকাশিত হয়েছে শুনেছি। রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি পেতে রোববার সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করা হয়েছে। রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পরপরই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

সাজা কমানোর পাঁচটি যুক্তি:
এক. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছাড়াই এবং মানসিক বিচ্যুতির কারণেই ঐশী জোড়া খুনের ঘটনা ঘটায় এবং সে অ্যাজমা, ওভারি সিস্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

দুই. তাঁর (ঐশী) দাদি এবং মামাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।

তিন. ঘটনার সময় তাঁর বয়স ১৯ বছরের কাছাকাছি, তখন সে সাবালকত্ব পেয়েছে মাত্র।

চার. ঐশীর বিরুদ্ধে অতীতে ফৌজদারি অপরাধের কোনো (ফৌজদারি মামলা) রেকর্ড নেই।

পাঁচ. ঘটনার দুই দিন পরই সে (ঐশী) স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পণ করে।

রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটি কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যাবে, তেমনটি নয়। বরং কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ দূর করতে সুস্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিচারিক আদালতের রায় সম্পর্কে বলা হয়, সামাজিক অবক্ষয় বিবেচনায় নিয়ে বিচারিক আদালত কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে রায় দেন, যেখানে বলা হয়েছে, একটি মেয়ে তার বাবা-মাকে নিজের হাতে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার সাহস দেখিয়েছে। তবে সাজা নির্ধারণ ও বিচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের আবেগ প্রদর্শনের সুযোগ নেই। কেননা আদালত আইনগত দিকগুলো ও প্রমাণাদি বিবেচনায় নেবে, কী পরিস্থিতিতে ঘটনাটি ঘটেছে, যেখানে একজন নারী ১৯ বছর বয়সে ওই কর্মকাণ্ড করেছে।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট চামেলিবাগের বাসা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন মাহফুজের ভাই মশিউর রহমান ওই ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করেন।

এ মামলায় ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় দেন। রায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড ও তাঁর বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন ঐশী। ডেথরেফারেন্স ও ঐশীর আপিল-জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে ৫ জুন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।