এক ও দুই টাকার নোট থাকবে না?
পাঁচ টাকাকে সর্বনিম্ন সরকারি নোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ে গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত ‘পাঁচ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত নোট ও ধাতব মুদ্রাকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর’বিষয়ক এক বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নতুন পাঁচ টাকার মুদ্রা ছাড়া হবে বাজারে। তবে তা ধাতব না কাগজের হবে, তা এখনো ঠিক করা হয়নি। তার আগে পাঁচ টাকার নিচে যেসব মুদ্রা আছে, সেগুলো বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে। পুরোনো এক ও দুই টাকার নোটগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করা হবে। এগুলো ধ্বংস করতে ৩০০ কোটি টাকার মতো লাগতে পারে।
টাকা ধ্বংস করতে এত টাকা লাগার কী আছে, ম্যাচের কাঠি দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেই হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, ‘বিষয়টি অত সিম্পল (সহজ) নয়। সারা দেশে অনেক টাকা আছে।’
এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সরকারের কী লাভ, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের চেয়ে বেশি লাভ হবে মানুষের। ‘ইউজলেস’ (অপ্রয়োজনীয়) টাকা নিয়ে মানুষকে ঘুরতে হয়।
বর্তমানে এক টাকা দিয়ে যে চকলেট পাওয়া যায়, তাহলে কি সেটি আর পাওয়া যাবে না? অর্থমন্ত্রী এমন প্রশ্নের জবাব দেন পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘এক টাকা দিয়ে চকলেট পাওয়া যায় নাকি?’
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমানে পাঁচ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত সবই ব্যাংক নোট। আর সরকারি নোট হচ্ছে এক টাকা ও দুই টাকা। ব্যাংক নোট বের করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সই থাকে। আর সরকারি নোট বের করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে সই থাকে অর্থসচিবের।
পাঁচ টাকাকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও এতে অনাপত্তি দিয়েছে বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের তুলনায় বর্তমানে ব্যাংক নোট যে হারে বেড়েছে, সরকারি নোট সে হারে বাড়েনি। ওই অর্থবছরে সরকারি নোটের (ধাতব মুদ্রাসহ) মূল্যমান ছিল ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা ২৫ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তাও প্রথম আলোকে জানান, বাজারে প্রচলিত মোট অর্থের মধ্যে সরকারি মুদ্রার পরিমাণ দিন দিন কমছে। ১৯৭৪-৭৫ সালে সরকারি মুদ্রা ছিল মোট অর্থের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী যে বললেন এক টাকা ও দুই টাকার নোট তুলে নিয়ে ধ্বংস করা হবে, তার মানে কি এই মুদ্রাগুলো সত্যি সত্যিই থাকবে না? তাহলে সাত, আট বা ১২-১৩ টাকার পণ্যের কেনাবেচা কীভাবে হবে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, বিষয়টি মোটেও তা নয়। এক টাকা ও দুই টাকা বাজারে চালু থাকবে। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, একমাত্র সরকারি নোট থাকবে পাঁচ টাকা; যাতে সই থাকবে অর্থসচিবের। এর নিচে সবগুলো ধীরে ধীরে ধাতব মুদ্রা হয়ে যাবে।
বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে গত রাতে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁকে ফোন করা হয় ও খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এরপর যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারে যতদিন যে মুদ্রার চাহিদা থাকবে, ততদিন সেগুলো চালু থাকবে। যেমন ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার মুদ্রা আইনানুযায়ী এখনো চালু আছে।
গতকালই (১৮ জানুয়ারি) দুই টাকার নোট ছাপানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি চিঠি এসেছে বলে জানান মাহফুজুর রহমান। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কয়েকটি আইন পরিবর্তন করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।