উপহারের বইয়ে থাকা হাতের লেখা সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারেরই। একজন নারীর কাছ থেকে বইটি তিনি উপহার পেয়েছিলেন। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয় ওই বই।
মাহমুদা হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখা পরীক্ষার জন্য গত ১৪ মার্চ আদালতে আবেদন করে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) এ–সংক্রান্ত পরীক্ষার নির্দেশ দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে লেখা হয়েছে, বাবুল আক্তারের প্রামাণ্য ইংরেজি ভাষার হাতের লেখা ও উপহার পাওয়া বইয়ের পাতায় থাকা নমুনা লেখার মধ্যে মিল রয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করে সূত্র জানায়, বইয়ের পাতায় ইংরেজি ভাষায় লেখা ছিল। তুলনামূলক পরীক্ষায় লেখার সাধারণ ও ব্যক্তিগত উভয় বৈশিষ্ট্যেরই মিল পাওয়া গেছে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে মুভমেন্ট, স্পিড, স্কিল, লাইন কোয়ালিটি, অ্যালাইনমেন্ট, পেন প্রেসার, স্পেসিং ইত্যাদির মিল এবং ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে অন্যান্য ইংরেজি অক্ষর যেমন ‘আর’, ‘ই’, ‘পি’, ‘এন’, ‘ও’, ‘এক্স’, ওয়ান, জিরো, সেভেন, ফাইভ, এইট-এর স্ট্রোকস ইত্যাদির গঠন বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতির মিল রয়েছে।
আদালতে বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়, মাহমুদা হত্যা মামলায় আলামত হিসেবে জব্দ করা জিনিসপত্রের মধ্যে একটি বই আছে। বইটি এক নারীর কাছ থেকে বাবুল আক্তার উপহার পেয়েছেন।
বইয়ের তৃতীয় পাতায় একজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ রয়েছে। এ ছাড়া বইটির শেষের দিকে আরেকজনের হাতে লেখা কিছু বিবরণ রয়েছে। দুটোই ইংরেজি ভাষায় লেখা। নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলাদা ব্যক্তি এ দুটো বিবরণ লিখেছেন।
তাঁদের পরিচয়, দেখা হওয়াসহ নানা তথ্য রয়েছে এতে। সন্দেহ করা হচ্ছে, বইটির তৃতীয় পাতায় থাকা লেখাটি ওই নারী লিখেছেন। আর শেষের অংশে লিখেছেন বাবুল আক্তার।
২২ মার্চ বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা নেন তদন্তকারী ব্যক্তিরা। এ সময় ইংরেজি ভাষায় ২০ পাতার হাতের লেখা জমা দেন তিনি।
পিবিআইয়ের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, হাতের লেখার নমুনা পরীক্ষায় মিল পাওয়া গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছে সিআইডি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, বইয়ে নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে যেসব কথাবার্তা লেখা রয়েছে, সেই বিষয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। পরদিন বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। একই দিন বাবুলের শ্বশুর ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করা হয়। মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিলে ৬ মার্চ আদালত তা গ্রহণ করেন। অন্যদিকে বাবুল আক্তারের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ করেননি। আদালতের নির্দেশে গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।
বাবুল আক্তার এখন ফেনী জেলা কারাগারে আছেন। তাঁর ছোট ভাই হাবিবুর রহমান আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে পাঁচ বছর আগের ঘটনায় বাবুল আক্তারকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। বাবুলের সঙ্গে কোনো নারীর সম্পর্ক ছিল না। তিনি ওই নারীকে বিয়েও করেননি। পিবিআই এখন পর্যন্ত সেই নারীকে হাজির করতে পারেনি। উল্টো বাবুলকে হয়রানি করছে। তাঁরা আইনগতভাবে সবকিছু মোকাবিলা করবেন।