ইসি নিয়োগ বিলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়নি
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য অনুসন্ধান কমিটি যাঁদের নাম প্রস্তাব করবে সেটি প্রকাশ, তাঁদের সম্পদের হিসাব হলফনামা আকারে প্রকাশ, প্রস্তাবিত নামগুলো নিয়ে গণশুনানির আয়োজন, অনুসন্ধান কমিটিতে সংসদে সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল ও তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন করে প্রতিনিধি রাখার বিধান যুক্ত করার মতো বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিরোধী দলের সাংসদেরা।
তবে এসব প্রস্তাব গ্রহণ করেননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি যে কটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন, তাতে আইনের খসড়ায় যা ছিল তা থেকে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল পাসের আগে তাতে বিভিন্ন দফায় সংশোধনী আনার জন্য মোট ৭৬টি প্রস্তাব দিয়েছিলেন সংসদ সদস্যরা।
একজন স্বতন্ত্র সাংসদসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণফোরামের মোট ১২ জন সাংসদ এসব সংশোধনী প্রস্তাব এনেছিলেন। অবশ্য তাঁদের মধ্যে একাধিক সাংসদ একই ধরনের প্রস্তাব এনেছিলেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ২২টি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এগুলোর বেশির ভাগই শব্দগত পরিবর্তন। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত যেসব সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়েছিল, আইনমন্ত্রী সেগুলো গ্রহণ করেননি।
অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ করা নামগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করা এবং এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখার বিধান সংযোজনের প্রস্তাব করেছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন। অনেকটা একই প্রস্তাব ছিল বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানার। তিনি সংশোধনী প্রস্তাবে বলেছিলেন, অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ করা নামগুলো এবং যোগ্যতা ও সম্পত্তির হিসাব হলফনামা আকারে প্রকাশ এবং নামগুলো নিয়ে গণশুনানির ব্যবস্থা রাখার বিধান যুক্ত করা হোক। ইসি হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ করার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব দেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ। তবে এসব প্রস্তাবের কোনোটাই গ্রহণ করা হয়নি।
আগের দুটি অনুসন্ধান কমিটির বৈধতা দেওয়ার ধারাটি আইন থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব এনেছিলেন বিএনপির রুমিন ফারহানা ও জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারি। আর বিএনপির হারুন প্রস্তাব রেখেছিলেন, নির্বাচনে অনিয়ম-দুর্নীতি-পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ থাকলে আগের কমিশনারদের বিচারের আওতায় আনা যাবে—এমন বিধান যুক্ত করা হোক। এসব প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।
রাশেদ খান মেননের আরেকটি প্রস্তাব ছিল, সিইসি ও কমিশনার পদে নিয়োগদানের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের জন্য একটি কাউন্সিল গঠনের। কাউন্সিলে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিরোধীদলীয় নেতা ও অ্যাটর্নি জেনারেল। কাউন্সিল প্রয়োজনে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের মতামত নেবে এবং পেশাজীবী সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত নিতে পারবে। কাউন্সিল প্রতি পদের বিপরীতে তিনজনের নাম সুপারিশ করবে। কমিশনারদের অন্তত দুজন নারী হবেন। এটিও গৃহীত হয়নি।
জাতীয় পার্টির সাংসদ ফখরুল ইমাম সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল ও তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে মোট তিন সদস্য অনুসন্ধান কমিটিতে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। রুমিন ফারহানা ও শামীম হায়দার পাটোয়ারিও একই ধরনের প্রস্তাব দেন। তবে আইনমন্ত্রী এগুলো গ্রহণ করেননি।
জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হকের একটি সংশোধনী প্রস্তাব ছিল, ঋণখেলাপিদের ইসিতে নিয়োগের অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান যুক্ত করা। এটিও গ্রহণ করা হয়নি।
উল্লেখযোগ্য যে কটি সংশোধনী আইনমন্ত্রী গ্রহণ করেছেন সেগুলোর মধ্যে আছে, অনুসন্ধান কমিটিতে রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী হবেন। প্রস্তাবটি করেছিলেন রাশেদ খান মেনন।
এ ছাড়া অনুসন্ধান কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নাম (নির্বাচন কমিশনারদের) প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে, আগে তা ১০ কার্যদিবস ছিল। এই সংশোধনী প্রস্তাব করেছিলেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম। আর বিলের শিরোনামেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করার পর এখন নাম হবে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২’। এই সংশোধনী ছিল জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সাংসদ রওশন আরা মান্নানের।