আমের নাম তাইওয়ান গ্রিন। আম তো নয়, যেন ছোটখাটো লাউ। গাঢ় সবুজ রঙের একেকটি আমের ওজন ৯০০ গ্রাম থেকে সোয়া কেজি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের গবেষণা বাগানের দুটি গাছে ঝুলছে এমন আম। কৃষিবিদদের মতে, শুধু আকৃতি ও ওজনের দিক থেকেই নয়, গুণ ও মানেও আমপ্রেমীদের মন জয় করবে এই আম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভিয়েতনাম থেকে আনা হয়েছে এই জাত। ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানিযোগ্য আমের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এই আম। ২০১২ সালে শিক্ষাসফরে ভিয়েতনামে যান বাংলাদেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারের ১২ জন উদ্যানতত্ত্ববিদ। সম্ভাবনাময় জাত মনে করে তাঁরা তাইওয়ান গ্রিনের ‘সায়ন’ (চারা তৈরির উপযোগী ডগা) সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। চারা তৈরির পর ২০১৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচারসহ বিভিন্ন হর্টিকালচারে এর চারা রোপণ করা হয়। দুই বছর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের দুটি গাছে আম ধরছে। সম্প্রতি একটি কাঁচা আম পেড়ে ওজন করে দেখা যায় ১ কেজি ২১০ গ্রাম। আলাদা করে আঁটি ও খোসা ওজন করে দেখা যায় মোট ওজনের ১৭ দশমিক ২৪ ভাগ। অর্থাৎ, ভক্ষণযোগ্য অংশ হচ্ছে ৮২ দশমিক ৭৬ ভাগ।
ধারণা করা হয়, কাঁচা মিষ্টি হিসেবেও এই আম আমপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তবে ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ রহিম প্রথম আলোকে বলেন, এটি শুধু কাঁচা মিষ্টি জাতের আম নয়। পাকলেও সুস্বাদু। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানের গাছে দুই কেজি ওজনের পর্যন্ত আম পাওয়া গেছে। নাবি জাতের এমন আম আর হয় না। বড়ই সম্ভাবনাময় জাত এটি। আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে এই আম।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক উদ্যানতত্ত্ববিদ মেহেদী হাসান বলেন, গত ২৭ জুলাই কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর উপস্থিতিতে কৃষিবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভায় বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় দেশি-বিদেশি ফলের জাত নিয়ে আলোচনা হয়। এখানে তিনি ‘তাইওয়ান গ্রিন’ আম উপস্থাপন করেন। গুণাবলি পর্যালোচনা সাপেক্ষে বাংলাদেশে এর সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট থেকে পরিপুষ্ট পর্যন্ত সব পর্যায়ের কাঁচা আম সুস্বাদু। সুস্বাদু পাকলেও। এর সংরক্ষণকালও দীর্ঘ। ২০ থেকে ২৫ দিন। ব্যাগিং করা আম (চীন থেকে আমদানি করা বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগে মোড়ানো) এক মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে। সব পর্যায়ের আম থেকেই ভালো বাজারদর পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানিযোগ্য আম হিসেবেও এটি সম্ভাবনাময়। ভিয়েতনাম থেকে এই জাতের সায়ন নিয়ে আসার পর আমাদের উদ্যানতত্ত্ববিদেরা এটির চারা তৈরি করে ময়মনসিংহের গৌরীপুর, কেওয়াটখালী, জামালপুর, নাটোর, যশোর, মেহেরপুরের বারাদি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচারে রোপণ করেন। দুই বছর থেকে এগুলোতে আম ধরছে। বাংলাদেশের সর্বত্রই এটি চাষযোগ্য।