
বৈশাখের গ্রামীণ মেলার জন্য সাজ খাবার তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ভাটারা গ্রামের বণিক পরিবারগুলোতে। এসব খাবার তৈরিতে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমানতালে কাজ করছেন।
বণিক পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় একমাত্র ভাটারা গ্রামেই সাজ খাবার তৈরি হয়। গ্রামের বণিক সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো চিনি বা গুড় দিয়ে বাতাসা ও কদমা ছাড়াও হাতি, ঘোড়া, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন আকৃতির সাজ খাবার তৈরি করে থাকে। প্রায় দেড় শ বছর ধরে গ্রামে সাজ খাবার তৈরি করছে বণিক পরিবারগুলো। ১০ বছর আগেও শতাধিক বণিক পরিবার সাজ খাবার তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কারণে পেশা বদল করেছে বণিক পরিবারগুলো। বর্তমানে ১০টি পরিবার এ খাবার তৈরি করছে। এসব খাবার মানিকগঞ্জ ছাড়াও গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
জানা যায়, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সাজ খাবারের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ মেলা বসে। আর এসব মেলায় সাজ খাবারের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। মেলাগুলোতে বাড়তি আকর্ষণ থাকে এসব খাবারের। মেলায় সাজ খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। গ্রামের অনেকেই মুড়ি বা খই ও দুধের সঙ্গে সাজ খাবার মিশিয়ে খেয়ে থাকেন।
গ্রামের বাসিন্দা দেবেশ বণিক (৫৫) বলেন, বিভিন্ন পালা-পার্বণে সাজ খাবারের কদর বেশি থাকে। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এ গ্রামের সাজ খাবারের শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বণিক পরিবারগুলো পুরোনো পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।
আরেক বাসিন্দা শ্যামল বণিক (৪০) বলেন, জেলায় আর আগের মতো আখ চাষ হয় না। এতে প্রয়োজনীয় আখের গুড় ও চিনি পাওয়া যায় না। এ কারণে রাজশাহী থেকে আখের গুড় কিনে আনতে হয়। এ ছাড়া গুড়, চিনি ও লাকড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় সাজ খাবারে আগের মতো মুনাফা পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ভাটারা গ্রাম থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে বালিয়াটি পর্যন্ত গ্যাস-সংযোগ আছে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তিনি এই গ্রামে গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
উদীচীর সাটুরিয়া উপজেলার সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গ্রামবাংলার মেলাগুলোতে সাজ খাবারের বাড়তি চাহিদা আছে। বৈশাখে গ্রামীণ মেলাগুলোতে এর কদর বেড়ে যায়। সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সাজ খাবার শিল্পের বিস্তৃতির সম্ভাবনা আছে।