কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ৬ তথ্য
বিস্ময়কর হলো, এখন আমরা পকেটে করে যে কম্পিউটার নিয়ে ঘুরে রেড়াচ্ছি, ৫০ বছর আগে সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার এর থেকে কম শক্তিশালী ছিল। আবার সেগুলোর আকারও ছিল একটি বাড়ির সমান। পকেটের মোবাইল থেকেও শক্তিশালী কম্পিউটার রয়েছে, রয়েছে সুপার কম্পিউটার। জটিল ও কঠিন গবেষণা এবং গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করা হয় এসব বিশেষ কম্পিউটার। তবে আরও বিস্ময়কর হলো, এমন কিছু গাণিতিক সমস্যা রয়েছে, যেগুলো এই সুপার কম্পিউটার দিয়েও সমাধান সম্ভব হয়নি। এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য নানান ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ধারণাটি। জেনে নিন এ সম্পর্কিত ৬ তথ্য:
১. কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ভিত্তি হলো, কোয়ান্টাম মেকানিকস। এটি প্রায় ১০০ বছরেরও আগের, পদার্থবিজ্ঞানের একটি ধারণা। পদার্থের পরমাণু এবং এর থেকেও ক্ষুদ্রতম অংশগুলো নিয়ে কাজ করার সময় বিশেষ বিশেষ আচরণের সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন, এই ক্ষুদ্র কণাগুলো একই সঙ্গে একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার পদার্থের এই বিশেষ ধর্মগুলো ব্যবহার করে তৈরির চেষ্টা করা হয়ে থাকে।
২. সম্প্রতি বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক সাময়িকী নেচার–এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে গুগল সিকোমোর নামে একটি কোয়ান্টাম প্রসেসর তৈরি করেছে। এটি ব্যবহার করে তারা একটি সমস্যা ২০০ সেকেন্ড সময়ে সমাধান করেছে, যা বর্তমান সময়ের সব থেকে শক্তিশালী কম্পিউটারে সমাধানের চেষ্টা করা হলে ১০ হাজার বছর সময় লাগত। যদিও কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা করছে এমন আরেকটি প্রতিষ্ঠান আইবিএম বলেছে বাস্তবে সুপার কম্পিউটারের এই কাজটি করতে ১০ হাজার বছর নয় বরং আড়াই দিন লাগবে।
৩. বর্তমান সময়ের কম্পিউটারগুলো ০ এবং ১ নির্ভর। কাজ করে দ্বিমিক পাটিগণিতের ধারণার ওপর ভিত্তি করে। আরও সহজ ভাষায় বললে, সাধারণ গণনার জন্য আমরা যেমন ০-৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো ব্যবহার করি, কম্পিউার সেখানে ০ ও ১ ব্যবহার করতে পারে। কম্পিউটারে ২ লিখতে হয় ১০ হিসাবে।
৪. সাধারণ কম্পিউটারের ক্ষুদ্রতম একক হলো বিট, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষুদ্রতম হলো, কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট। বিটের ক্ষুদ্রতম মান ০ ও ১ আর কিউবিটের মান ০ এবং ১ এর মধ্যবর্তী যেকোনো সংখ্যা হতে পারে। ফলে একই পরিমাণ স্থানে অনেক বেশি তথ্য সংরক্ষণ ও গণনা করা সম্ভব হবে। যদিও কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির কাজটি খুবই জটিল।
৫. গুগলের তৈরি কোয়ান্টাম কম্পিউটার ঘোষণা দিলেও এটি এখনই কোনো কাজে ব্যবহার করার মতো উপযোগী হয়ে ওঠেনি। সেই পর্যায়ে যেতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আর এই গবেষণা যে শুধু গুগল একাই করছে এমন নয় বরং মাইক্রোসফট, আইবিএম, ইন্টেল, রিগেটি, সাইকোয়ান্টাম, আর আয়নকিউর মতো আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
৬. কোয়ান্টাম কম্পিউটার সফলভাবে তৈরি হয়ে গেলেই কিন্তু বর্তমান সময়ের কম্পিউটারগুলো বাতিল হয়ে যাবে বা কেউ আর ব্যবহার করবে না এমন নয়। এটি ব্যবহার করা হবে নতুন ধরনের গবেষণা ও বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। যেমন, এখন সুপার কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অন্যান্য নানান ধরনের কম্পিউটারও একইভাবে চালু আছে।