পরীক্ষাগারে তৈরি হলো মস্তিষ্ক
পরীক্ষাগারে গবেষকেরা মটরদানার সমান মস্তিষ্ক তৈরি করেছেন। ওই মস্তিষ্ক থেকে বৈদ্যুতিক কার্যক্রমও শনাক্ত করতে পেরেছেন তাঁরা। এর ফলে স্নায়বিক অবস্থার মডেল তৈরির পথ খুলে গেল। এতে মস্তিষ্কের বিকশিত হওয়ার মৌলিক প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে ওই মস্তিষ্ক সচেতন কি না, তা স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরাও তাঁদের তৈরি করা মস্তিষ্কের সচেতনতা নিয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না। এতে এ খাতের গবেষণা সামনে এগিয়ে নিতে নৈতিকতার প্রশ্ন উঠবে।
প্রাপ্তবয়স্ক স্টেম সেল থেকে ‘ব্রেইন অর্গানয়েডস’ তৈরির বিষয়টি এক দশক ধরে আলোচনায় থাকলেও আগে কখনো তাতে কার্যকর নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়নি।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালফোর্নিয়া সান ডিয়েগোর জীববিজ্ঞানী অ্যালিসন মুয়োত্রি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমাকে ব্রেইন অর্গানয়েডের কার্যক্রম করার বিষয়ে আমি বলতাম সম্ভব নয়।’
গবেষক মুয়োত্রি ও তাঁর সহকর্মীরা গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধ ‘সেল প্রেস’ সাময়িকীতে প্রকাশ করেছেন।
গবেষকেরা বলেছেন, স্টেম সেল জন্মানোর উন্নত পদ্ধতি বের করতে গিয়ে এ সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা। মায়ের পেটে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক যেভাবে বিকশিত হয়, তাঁরা মস্তিষ্কের নিউরনকে বিকশিত হওয়ার পর্যাপ্ত সময় দেন। দুই মাসের মাথায় তখন তাঁরা মস্তিষ্ক তরঙ্গ সংকেত পেতে শুরু করেন। এ তরঙ্গ বিরল এবং একই ফ্রিকোয়েন্সির, যা অপরিণত মানবমস্তিষ্ক থেকে আসে। তবে মস্তিষ্ক বেড়ে ওঠার সময় দিয়ে তাঁরা ভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি পেতে শুরু করেন। এ সংকেত ছিল নিয়মিত, যা নিউরাল নেটওয়ার্কের উন্নতির দিক নির্দেশ করে।
গবেষকেরা আরও বলেন, বিভিন্ন স্নায়বিক অবস্থা, যেমন: অটিজম, মৃগী বা মানসিক বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি মস্তিষ্কের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা আশা করছেন, স্টেম সেল থেকে ব্রেইন অর্গানয়েড তৈরি করে আরও উন্নত মডেল তৈরি এবং এ ধরনের সমস্যার সমাধান বের করতে পারবেন।
গবেষকেরা বলছেন, এ মস্তিষ্কের সচেতনতা নিয়ে এখন তাঁরা সন্দিহান। সচেতনতা শনাক্ত করার কোনো সিস্টেম এখন তাঁদের হাতে নেই। তবে এ মস্তিষ্ক যদি মানুষের মস্তিষ্কের ধারেকাছে চলে যায়, তবে নানা নৈতিকতার প্রশ্ন উঠতে শুরু করবে বলেই মনে করছেন তাঁর। এ ক্ষেত্রটি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও তখন সামনে চলে আসবে।