ঝাড়বাতির আলোয়
নান্দনিক আলোয় উজ্জ্বলতা যেমন বাড়ে, তেমনি ঘরের সৌন্দর্যও ফুটে ওঠে। যাঁরা শৌখিন, তাঁরা আলো নিয়ে নানা কিছু করে থাকেন। এর মধ্যে অনেকেই ঘরে রাখেন ঝাড়বাতি।
যেমন পছন্দ, তেমন ঝাড়বাতি
একেকজনের রুচি ও পছন্দ আলাদা। তাই তাঁদের পছন্দের ভিন্নতা রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে দোকানে বিভিন্ন রকমের ঝাড়বাতি রয়েছে। বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে একটু ছোট বা মাঝারি আকারের ক্রিস্টাল, কাঠ, ধাতব ঝাড়বাতি বেশি বিক্রি হয়। এ ছাড়া সিলিং, ইউনিক গ্লাস, বাটারফ্লাই মোটিফ গ্লাসের, ড্রাম, ফুলেল কিংবা আলোর রং বদলানো ঝাড়বাতিও অনেকে ব্যবহার করে। গুলশানের ১ নম্বরে অবস্থিত লাইটিং প্যালেসের বিক্রয় ব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া জানান, বাংলাদেশে বেশির ভাগ ঝাড়বাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বিশেষ করে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে।
কোথায় লাগাবেন?
গোলাম কিবরিয়া জানান, ঝাড়বাতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হলো বসার ঘর। বসার ঘরটি যদি একটু বড় হয় তাহলে বড় আকৃতির ঝাড়বাতি বেশ মানিয়ে যাবে। বসার ঘরে সোফাসেট বরাবর অথবা একটু কোণ করে ঝুলন্ত ঝাড়বাতি ব্যবহার করলে ভালো হয়। মাঝারি আকারের বসার ঘরে চারকোনা আকৃতির ঝাড়বাতি সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। ডুপ্লেক্স বাড়ির ক্ষেত্রে চাইলে আপনি সিঁড়ি বরাবর লাগিয়ে নিতে পারেন এই ঝুলন্ত ঝাড়বাতি।
শোবারঘরে একটু ফুলেল নকশা বা ক্রিস্টালের ব্ল্যাক ক্যান্ডেলার ঝাড়বাতি ব্যবহার করতে পারেন। এর আলো বেশি উজ্জ্বল হয় না, তাই শোবারঘরে একটা আলো-আঁধারির মিশেল সহজেই তৈরি হয়ে যাবে। বড় ব্যালকনিতে ব্যবহার করতে পারেন ক্রিস্টালের মাঝারি আকারের ঝাড়বাতি। চাইলে খাবারঘর, পড়ার ঘরেও ঝাড়বাতি ব্যবহার করা যায়। তবে ঘরে কাঠের তৈরি ঝাড়বাতি মানানসই। মাঝারি ধরনের বসার ঘরে সিলিংয়ের সঙ্গে লাগানো ঝাড়বাতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন ফুলের নকশা বা চারকোনা আকৃতির ঝাড়বাতি পাওয়া যায়, যা মাঝারি ধরনের বসার ঘরে খুব মানিয়ে যাবে। বসার ঘর বড় কিন্তু সাদামাটা ফার্নিচার, সে ক্ষেত্রে ঝাড়বাতি না লাগানোই ভালো। এ ক্ষেত্রে বসার স্থানে একটি কর্নার বেছে নিয়ে ছোট-বড় কয়েকটি হ্যাঙ্গিং ব্যবহারই বেশি ফ্যাশনেবল। ঝাড়বাতি ডাইনিং রুমের সাবেকিয়ানাকে ধরে রাখে। খেয়াল রাখবেন, ডাইনিং টেবিল থেকে যেন ঝাড়বাতি বড় না হয়। আর দেয়াল থেকে যেন ৪ ফুট দূরে থাকে।
জেনে রাখা ভালো
l ঝাড়বাতিতে হলুদ লাইটেই বেশি ভালো দেখায়। হলুদ আলো ঘরে একটি সুন্দর আবহ তৈরি করে। দেয়ালের রং যা-ই হোক, হলুদ লাইট তার সঙ্গে মানিয়ে যাবে। তবে যাঁদের দেয়াল সাদা বা অফহোয়াইট, তাঁরা চাইলে সাদা লাইটও ব্যবহার করতে পারেন।
l পছন্দ হয়ে গেল আর ঝাড়বাতি কিনে ফেললেন, এটা কখনোই করবেন না। ঘরের মাপ অনুযায়ী ঝাড়বাতি কিনবেন। যদি বড় হলঘরে ছোট মাপের ঝাড়বাতি লাগান, তবে তা যেমন মানাবে না, অন্যদিকে ছোট ঘরে বড় মাপের ঝাড়বাতি একেবারেই বেমানান।
যত্ন
ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার আগে এর কিছু নিয়ম জেনে নেওয়া প্রয়োজন। ক্রিস্টাল বা কাচের ঝাড়বাতি দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করলে ময়লা জমে যায়। এর ফলে আলোর বিচ্ছুরণ কম হয়। পরিষ্কার করার আগে সম্ভব হলে একটি ছবি তুলে রাখুন। কারণ প্রতিটি অংশ খুলে যখন পরিষ্কার করবেন এবং পরে যখন সেগুলো ঠিক জায়গামতো লাগাবেন তখন ওই ছবিটা খুব কাজে লাগতে পারে। ঝাড়বাতি যখন পরিষ্কার করবেন তখন এর নিচে মোটা কাপড় রেখে পরিষ্কার করুন। এতে কোনো অংশ মাটিতে পড়ে গিয়ে ভাঙার আশঙ্কা থাকবে না। ঝাড়বাতির নিচে রাখা আসবাব ঢেকে রাখুন, এতে ময়লা পড়ে সেগুলো নোংরা হবে না। ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস পরে নিন। এতে আঙুলের ছাপ পড়বে না। ঝাড়বাতি পরিষ্কার করার জন্য একটি সলিউশন স্প্রে তৈরি করে নিন। পানি ও ভিনেগার মিশিয়ে একটি স্প্রে করার বোতলে ভরে তৈরি করে নিন। এরপর একটি পরিষ্কার নরম কাপড়ে সলিউশন স্প্রে করে ঝাড়বাতির বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার করুন। পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। খুব বড় ঝাড়বাতি হলে সেটি কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিন। এতে পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে।
দরদাম
ক্রিস্টালের বিভিন্ন সাইজের ঝাড়বাতি বাজারে পাওয়া যায়, দাম ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। একটু বড় সাইজের ঝাড়বাতির দাম পড়বে ১ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। কাচের সঙ্গে কাঠ ও মেটালের সংযোজনে বিভিন্ন সাইজের ঝাড়বাতি পাবেন ১৫ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে।
কোথায় পাবেন
বিভিন্ন ডিজাইনের ঝাড়বাতি আপনি পেয়ে যাবেন পল্টন, গুলশান ১ ও ২ নম্বর সার্কেল, বসুন্ধরা সিটি, পুরান ঢাকার নবাবপুর, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে। এখানে অনেক লাইটের দোকান রয়েছে। এর মধ্য থেকেই বাছাই করে নিতে পারেন পছন্দের ঝাড়বাতি।