বাংলাদেশের হয়ে মুজিবুরই যেখানে প্রথম
>১৯৮৪ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে এসএ গেমসে (তখন সাফ গেমস) প্রথম ব্যক্তিগত সোনার পদক উপহার দিয়েছিলেন ট্রিপল জাম্পার মুজিবুর রহমান মল্লিক।
অ্যাথলেটিকসে সোনা জয়! এ প্রজন্ম তো প্রায় ভুলেই গেছে ব্যাপারটা। অলিম্পিক কিংবা এশিয়ান গেমস অনেক দূরের ব্যাপার। সাফ গেমস, হালে যেটিকে এস এ গেমস বলা হয়, সেই আঞ্চলিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাতেও অ্যাথলেটিকসে সোনার পদক খুব বেশি নেই বাংলাদেশের। অথচ, ১৯৮৪ সালে কাঠমান্ডুর প্রথম সাফ গেমসেই অ্যাথলেটিকস দেশকে উপহার দিয়েছিল দুটি সোনার পদক। নির্দিষ্ট করে বললে এসএ গেমসে দেশের প্রথম ব্যক্তিগত সোনার পদকটি আসে অ্যাথলেটিকস থেকেই।
মুজিবুর রহমান মল্লিক। এই প্রজন্মের কাছে নামটা কিছুটা অপরিচিতই থাকার কথা। সেটি খুবই স্বাভাবিক। এ দেশের রেকর্ডপত্র আগলে রাখার চর্চাটা যে খুবই দুর্বল। সে কারণে সাফ গেমসে দেশকে প্রথম ব্যক্তিগত সোনার পদক উপহার দেওয়া ক্রীড়াবিদের নামটা বিস্মৃতই থাকে। সে থাকুক। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই মুজিবুর রহমান মল্লিক একটা ইতিহাসই। ভারত, পাকিস্তানের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে মুজিবুর রহমান মল্লিকের সেই সাফল্য যেকোনো বিচারেই গর্ব করে চিরদিন বলে যাওয়ার মতোই।
যশোরের নোয়াপাড়ায় জন্ম নেওয়া মুজিবুর রহমান মল্লিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনে চাকরি ক্রীড়াবিদ হওয়ার সুবাদেই। ১৯৭৫ সালে অ্যাথলেটিকসে পা রাখা মুজিবুর বেশ কয়েকবার জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পেলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ১৯৮৪ সাফ গেমসেই প্রথম সোনার পদক জেতেন। অথচ, সোনা জয়ের আগে কেউই ধারণা করতে পারেননি ভারতের সুব্রামেনিয়ামের মতো ট্রিপল জাম্পারকে পেছনে ফেলে তিনি সোনা জিততে পারবেন। সে সময় দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ট্রিপল জাম্পার ছিলেন এই সুব্রামেনিয়ামই।
প্রতিযোগিতায় ষষ্ঠ জাম্পে সোনা নিশ্চিত হয়েছিল মুজিবুরের। সে দিনটি ভারতের প্রতিযোগী সুব্রামেনিয়ামের ছিল না একেবারেই। বেশ কয়েকবার ভুল লাফে ডিসকেয়ালিয়ফাইডও হয়েছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীও মোটামুটি হিসেবের মধ্যেই ছিলেন। পাকিস্তানের আরেক শক্তিশালী প্রতিযোগী হায়দার আলী কয়েকটি লাফ খুব ভালো দিলেও মুজিবুরের ষষ্ঠ লাফটি ছাড়িয়ে যায় সবকিছুকেই। স্বপ্নের মতো একটা লাফেই সোনা নিশ্চিত হয়ে যায় মুজিবুরের।
অ্যাথলেটিকসে সেবার ৪X ১০০ মিটার রিলের সোনাজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মুজিবুর। সাইদুর রহমান ডন, আফতাব মোল্লা ও শাহ আলম ছিলেন তাঁর সঙ্গী। আফতাব মোল্লার ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে সেবার কাঠমান্ডু থেকে অ্যাথলেটিকসে আরও একটি ব্যক্তিগত সোনার দেখা মিললেও মিলতে পারত। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ফটো ফিনিশে রুপা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় আফতাবকে। অথচ ফিনিশিং রোপে ‘দ্রুততম মানব’ ভারতের সুমনওয়ালা আদিলের সঙ্গে ছিলেন সমানে-সমান। দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশ প্রথম সাফ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানব’ খেতাবটি ছিনিয়ে আনতে পারেনি।
অ্যাথলেটিকসে প্রথম সাফে বাংলাদেশের অর্জন ছিল ২টি সোনা, ১ রুপা ও ৫ ব্রোঞ্জ। ২০০৬ সালের পর থেকে দক্ষিণ এশীয় গেমসের অ্যাথলেটিকসে সোনা-বঞ্চিত বাংলাদেশ। ১৯৮৪ সালের সেই ফলকে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠেয় আরও আসরের আগে প্রেরণা হিসেবে নিতেই পারে দেশ। মুজিবুর রহমান মল্লিক হতে পারেন প্রেরণার বড় অনুষঙ্গ।