'বাংলাদেশে ভালো আছি বলেই আরও এক বছর থাকছি '
>কোস্টারিকার হয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন দানিয়েল কলিনদ্রেস। বসুন্ধরা কিংসের হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন প্রায় ৮ মাস আগে। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়ে কিংসকে এনে দিয়েছেন লিগ ও স্বাধীনতা কাপের শিরোপা। এই সময়ের মধ্যে কিছুটা বাংলাও শিখে নিয়েছেন। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা, ভাবনা, কোস্টারিকা জাতীয় দল ও জাতীয় দলে সতীর্থ রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে নিয়ে গতকাল বসুন্ধরা করপোরেট অফিসে ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসানের রুমে বসে খোলামেলা গল্প করলেন রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে
‘আসসালামু আলাইকুম, কিমুন আছো?’, কোস্টারিকার জার্সিতে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলারের মুখে ভাঙা বাংলা শুনলে একটু অবাক হতেই হয়। কিন্তু এর পরেই ইংরেজিতে জানিয়ে দিলেন, ‘সাক্ষাৎকার পর্ব কিন্তু ইংরেজিতে, হা... হা... হা...’
প্রথম আলো: দুই ম্যাচ হাতে রেখে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করায় অভিনন্দন। এতটা দাপট নিয়ে শিরোপা জেতা যাবে অধিনায়ক হিসেবে এমন আশা কি কখনো করেছিলেন?
কলিনদ্রেস: লিগ শিরোপা জিতব, সে বিশ্বাস ছিল। তবে সত্যি কথা বলতে এতটা দাপট নিয়ে জিতব এমন আশা করিনি। যা হয়েছে, এর চেয়ে ভালো আর আশা করা যায় না।
প্রথম আলো: টানা ১৪ ম্যাচে জয়ের রেকর্ড। ২২ ম্যাচে মাত্র এক হার। আর দুই ম্যাচ হাতে রেখে শিরোপা নিশ্চিত। এমন সাফল্যের রেসিপি কী?
কলিনদ্রেস: পয়েন্ট টেবিল দেখলে অনেকে বলতে পারেন, কোনো রকম বাধা ছাড়াই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বসুন্ধরা। কিন্তু বাস্তবতা হলো লিগটা খুব কঠিন ছিল। খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কিছু ম্যাচ হয়েছে। কেউ জানবে না শিরোপার জন্য আমরা কতটা পরিশ্রম করেছি। আর অবশ্যই টিম ওয়ার্ক। স্থানীয় ভালো ফুটবলারদের সঙ্গে ভালো বিদেশি যোগ হওয়ায় দলের শক্তিতে ভারসাম্য ছিল। ক্লাব কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়াটা ছিল চমৎকার। আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। এই লক্ষ্যটাই আমাদের এত দূর নিয়ে এসেছে।
প্রথম আলো: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নিজের দেশ থেকে কোনো শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছেন?
কলিনদ্রেস: অবশ্যই অনেক অভিনন্দন পেয়েছি আমার দেশের থেকে। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে খেলা আমার সতীর্থ খেলোয়াড়েরাও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রথম আলো: আপনার জাতীয় দলের এক সময়ের সতীর্থ কেইলর নাভাস রিয়েল মাদ্রিদের গোলরক্ষক। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
কলিনদ্রেস: দূরত্ব বেড়ে গেছে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মাঝে মাঝে কথা হয়। মেসেজেই যোগাযোগ হয় বেশি। খেলোয়াড়েরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, যোগাযোগটা থাকে। তবে কমে গেছে। বাংলাদেশে আমার দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জানলে আমাকে অবশ্যই অভিনন্দন জানাবে।
প্রথম আলো: বিশ্বকাপের পর কেবল দুইটি ম্যাচের জন্য জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন। এর পরে জাতীয় দল থেকে বাদ। এটা কি ফুটবল বিশ্বের তৃতীয় সারির দেশ বাংলাদেশে খেলার কারণে?
কলিনদ্রেস: আমি আসলে বিষয়টা এভাবে দেখি না। বাস্তবতা হলো আমার বয়স এখন ৩৪। স্বাভাবিকভাবে এই বয়সে জাতীয় দলে খেলাটা একটু কঠিনই। দেশে এখন অনেক তরুণ উইঙ্গার উঠে এসেছে। তবে জাতীয় দলের কোচ আমার সব খোঁজ খবরই রাখেন।
প্রথম আলো: ফুটবল ক্যারিয়ারটা নিজের দেশেই পার করেছেন। এই প্রথম দেশের বাইরে খেলতে আসা। আসার আগে প্রত্যাশা কী ছিল এবং তাঁর কতটুকু পূরণ হয়েছে?
কলিনদ্রেস: আমি জেনেই এসেছি বাংলাদেশে খুব শরীরনির্ভর (ফিজিক্যাল) ফুটবল খেলা হয়। স্থানীয় ফুটবলাররা ভালো। তারা গতিময় ফুটবল খেলতে জানে। অন্যান্য বিদেশিরাও ভালো। কোস্টারিকার সঙ্গে শরীরনির্ভর খেলার কিছুটা মিল আছে। কোস্টারিকা ক্যারিবীয় অঞ্চলের দিকে পড়েছে। ফিজিক্যাল নির্ভর খেলায় কিছুটা মিল আছে। আমি সবকিছু জেনেই এসেছি। আর এখন পর্যন্ত নিজে যা করতে পেরেছি। আমি সন্তুষ্ট। এর বেশি আমি আশা করিনি। তবে এর চেয়ে ভালো করার সামর্থ্য আমার আছে।
প্রথম আলো: স্ত্রী নিয়ে বাংলাদেশে সংসার পেতেছেন। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ কেমন লাগছে?
কলিনদ্রেস: আমরা খুবই সুখে আছি। সবকিছুর সঙ্গে আমি ও আমার স্ত্রী মানিয়ে নিতে পেরেছি। অনুশীলন ও খেলা না থাকলে ঘুরে বেড়াই। এখানে আমাদের নতুন বন্ধু হয়েছে। অবসরে তাদের সঙ্গে দেখা করি, খেতে যাই। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে ভালো আছি বলেই তো আগামী মৌসুমের জন্য বাংলাদেশে থেকে যাচ্ছি।
প্রথম আলো: বসুন্ধরা ছাড়া অন্য কোনো ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
কলিনদ্রেস: নিজের ঘরে (বসুন্ধরায়) ভালো থাকলে অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য ভাবব কেন! বাংলাদেশের কোনো ক্লাব থেকে প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব ছিল ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে। তবে এখানে ভালো আছি বলেই সেগুলো নিয়ে ভাবিনি।
প্রথম আলো: বাসায় বাংলাদেশি খাবার রান্না হয়?
কলিনদ্রেস: সকালের নাশতায় পরোটা প্রিয় খাবার। ডাল ভালো লাগে। চিকেন বিরিয়ানি খাওয়া হয়। তবে মসলা ও ঝাল বেশি হওয়ায় খুব বেশি খাই না। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনেই স্বাস্থ্য সচেতন। বিরিয়ানি ভালো লাগলেও তাই বেশি খাওয়া হয় না।
প্রথম আলো: প্রায় আট মাস ধরে বাংলাদেশে আছেন। আপনার চোখে বাংলাদেশের ফুটবলের ভালো-মন্দ বিষয় কী?
কলিনদ্রেস: এখানে ভালো ফুটবল হয়। ভালো মানের ফুটবলার আছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন কোয়ালিটির ফুটবলার দেখেছি। কেউ ভালো পাসিং খেলে। কিছু খেলোয়াড় খুব জোরে দৌড়াতে পারেন। আমাদের দলে মতিন আছে, শেখ রাসেলে বিপলু আছে, আরামবাগে আরিফ আছেন। বল নিয়ন্ত্রণের জন্য ইমন ভালো। এ ছাড়া আবাহনীতে কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় দেখেছি। তবে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। শুনেছি ফুটবলের জন্য বাংলাদেশে কোনো একাডেমি নেই। এটা খুবই হতাশাজনক। এ ছাড়া স্টেডিয়ামগুলোর মান খারাপ। নোয়াখালীতে যে স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছে, সেখানে প্রিমিয়ার লিগের খেলা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম, নীলফামারী স্টেডিয়াম, ময়মনসিংহ ও সিলেট স্টেডিয়াম ভালো।
প্রথম আলো: বাংলাদেশে পছন্দের কোনো খেলোয়াড় আছে?
কলিনদ্রেস: ওই তো বললাম বেশ কয়েকজন আছে। আমাদের দলের কথা যদি বলি মতিন, ইমন, জনি, ইব্রাহিম। গোলরক্ষক হিসেবে জিকো খুবই ভালো। যদি আলাদা আলাদা করে বলি ৫ নম্বর পজিশনে জনি ভালো করছে। পাসিং ফুটবলে ইমন দুর্দান্ত। মতিন খুব গতিময় ও স্কিলফুল খেলোয়াড়। ডিফেন্ডার নাসির ও ফয়সাল কৌশলগত ভাবে ভালো।
প্রথম আলো: অন্য ক্লাব থেকে যদি কোনো খেলোয়াড়কে বসুন্ধরায় নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, আপনি কাকে নিতে চান (দেশি ফুটবলার)?
কলিনদ্রেস: আমি ক্লাব কর্তা না। সুতরাং সে সুযোগ নেই। তবে আপনার জানার স্বার্থে বলতে পারি বেশ কিছু ভালো খেলোয়াড় দেখেছি। শেষ ম্যাচে মোহামেডানের তকলিচকে ভালো লেগেছে। মুক্তিযোদ্ধার রাইট উইঙ্গার খুবই ভালো। শেখ রাসেলের বিপলু। আবাহনীরও কয়েকজন ফুটবলার আছে। তাদের নাম মনে করতে পারছি না। আর যদি বিদেশি ফুটবলারের কথা বলেন, আমাদের দলের বিদেশিরাই সেরা।