জয় হোক তাদেরই যাদের সেটা প্রাপ্য
একটা ব্যাপার নিশ্চিত, রোববার সন্ধ্যায় আইসিসি বিশ্বকাপ ট্রফিতে একটা নতুন নাম উঠবে। ইংল্যান্ড যেভাবে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ধসিয়ে দিয়েছে, নিজেদের সর্বশেষ তিন ম্যাচেই যেভাবে খেলেছে, তাতে ওদের অজেয় মনে হচ্ছে। (চোটের কারণে তিন ম্যাচে বাইরে থাকা) জেসন রয়ের দলে ফেরা পুরো ইংল্যান্ড দলে মেরুব্যবধান গড়ে দিয়েছে। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ড যে তিনটি ম্যাচে হেরেছে, তার দুটিতে (শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া) ও খেলেনি। ইনিংসের শুরুতে ওর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রতিপক্ষ বোলারদের ম্যাচে জেঁকে বসতেই দিচ্ছে না।
ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দেবে সেমিফাইনালের অস্ট্রেলিয়ার রান যেমন অনায়াসে ওরা তাড়া করে ফেলেছে, সেটি। কারণ যে ম্যাচগুলোতে ওরা হেরেছে, সবগুলোতেই রান তাড়ায় বেশি আক্রমণাত্মক খেলতে গিয়ে ওরা হোঁচট খেয়েছে। সেমিফাইনালে রয় একেবারে প্রথম বল থেকেই আক্রমণ করেছে, যেটা অতীতের ইংল্যান্ড দলগুলোর মনোভাবের তুলনায় পুরো উল্টো। ও যেমন ফর্মে আছে, সেটা চালিয়ে যেতে পারলে ওকে টেস্ট দলে দেখাটাও চমক হবে না। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং টুর্নামেন্টে অন্য অনেক দলের মতো এক-দুজনের ওপর নির্ভরশীল নয়। ক্রিস ওকস আট নম্বরে ব্যাট করে, সেটাই বলে, ওদের ব্যাটিংয়ের গভীরতা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে বেশি।
নিউজিল্যান্ড আরও একবার চুপিসারে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছে। এই দলটাকে ঘিরে মানুষের আগ্রহ যে খুব বেশি, এমন নয়। দলে তেমন মহাতারকা বলতেও কেউ নেই। রগচটাও তেমন কেউ নেই। আগে মাঠে অনেক বকবক করে প্রতিপক্ষকে জ্বালিয়ে মারত, এমন একটা দলে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম কী অসাধারণ একটা লিগ্যাসিই না রেখে গেছে! এখন ওরা মাঠে প্রতিপক্ষকে বলতে গেলে তেমন খোঁচায়ই না। খেলাটা ওরা নিজেদের মতো করে উপভোগ করে, ওদের দক্ষতাই ওদের হয়ে যা বলার বলে। ম্যাককালামের ‘কোড’টাই কেন উইলিয়ামসন বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, ওর ঠান্ডা মাথার নেতৃত্ব পুরো দলকে কোনো চাপ ছাড়াই নিজেদের সহজাত খেলাটা খেলার সুযোগ করে দেয়।
ট্রেন্ট বোল্ট ওদের বোলিং বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছে, ইনিংসের শেষ দিকে উইকেটও এনে দিচ্ছে। সেমিফাইনালে শুরুর দিকেই ভারতকে হুল ফোটানো ম্যাট হেনরির দিকেও চোখ রাখতে হবে। রস টেলর বিশ্বকাপে ওর শেষটা দারুণ কিছু করে জয়ে শেষ করতে চাইবে। নিউজিল্যান্ড এই খেলাটার সবচেয়ে সুন্দর আচরণের দল, ওদের হাতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখাটা তাই দারুণ হবে।
ইংল্যান্ড জিতলে তাদেরও নিউজিল্যান্ডকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কারণ, সর্বশেষ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে লজ্জার বিদায়ের পর ওদের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড, যারা তখনই আক্রমণাত্মক ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলত। ইংল্যান্ড সেটা অনুকরণ করেছে, আরও ভালোও খেলছে। তাই আজ লড়াইটা নিউজিল্যান্ড আর ‘নিউ ইংল্যান্ডে’র মধ্যে। তাতে জয় হোক তাদেরই, যাদের সেটা প্রাপ্য।