আজ অস্ট্রেলিয়া ৪৯%, ইংল্যান্ড ৫১%
দ্বাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেমিতে আজ এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই সিনিয়র সিটিজেনের মর্যাদার লড়াই।
ক্রিকেট বিশ্বের এই দুই সিনিয়র সিটিজেন যে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া, তা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
আজি হতে শতবর্ষ আগে, পৃথিবী যখন এই খেলাটি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানত না, এমনকি নামটি পর্যন্ত না, তখন এই দুটি দেশই ক্রিকেট খেলাটার প্রচলন করেছিল।
১৯৭১ সালে এক দিনের সীমিত ওভারের ক্রিকেট ম্যাচের জন্ম অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হলেও বিশ্বকাপ ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে, ১৯৭৫ সালে। পরপর তিনবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজন করেও ইংল্যান্ড (১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩) বিশ্বকাপ জিততে পারেনি।
পরপর দুবার কাপ জেতে আজকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, তখনকার ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম বিশ্বকাপের রানার্সআপ হয় অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় কাপের রানার্সআপ হয় ইংল্যান্ড।
১৯৮৩ সালের তৃতীয় বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্নভঙ্গ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আন্ডারডগ ভারত বিশ্বকাপ জিতে নিলে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নবপ্রাণের সঞ্চার হয়।
সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।
১৯৮৭ সালে ভারত আয়োজন করে চতুর্থ বিশ্বকাপের। সেবার প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে দুই সিনিয়র সিটিজেন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। কলকাতার ইডেন গার্ডেনস মাঠে অনুষ্ঠিত সেই ফাইনালে ইংল্যান্ডের মাইক গ্যাটিংয়ের একটি রিভার্স সুইপ থেকে ক্যাচ ধরে ইংল্যান্ডের প্রায় জেতা ম্যাচটি ছিনিয়ে নেয় অজিরা। শুরু হয় বিশ্ব ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার জয়যাত্রা। মন্দভাগ্য নিয়ে ইংল্যান্ড আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ১৯৯২ সালে।
কিন্তু সেবারও ফেবারিট ইংল্যান্ড মেলবোর্নের মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে বিশ্বকাপ হারায়।
তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ইংল্যান্ড আর কখনো বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি।
ইংল্যান্ড রানার্সআপ হয়েছে তিনবার, সেমি থেকে বিদায় নিয়েছে দুবার।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের নিকটাত্মীয় অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতেছে পাঁচবার। রানার্সআপ হয়েছে দুবার। সেমিতে হেরে তারা বিদায় নেয়নি একবারও।
এই যখন ইতিহাস, তখন স্বদেশের মাটিতে পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত দ্বাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দ্বিতীয় সেমিতে আজ ভাগ্যহত ইংল্যান্ড মুখোমুখি হতে চলেছে ভাগ্যবান অস্ট্রেলিয়ার। রবার্ট দ্য ব্রুসের সামনে আজ ইংল্যান্ডের অগ্নিপরীক্ষা হবে।
লিগ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া পরাজিত হয়েছে ইন্ডিয়া ও সাউথ আফ্রিকার কাছে। ইংল্যান্ড পরাজিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কাছে।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি রান দুই ইনফর্ম ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চের। উইকেট শিকারিদের শীর্ষে রয়েছেন ২৬ উইকেট নিয়ে মিচেল স্টার্ক। তারপরই ১৩ উইকেট নিয়ে প্যাট কামিন্স।
পক্ষান্তরে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপের গভীরতা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে অনেক বেশি। তাদের মধ্যে সেঞ্চুরিয়ান রয়েছেন বেশ কজন—জো রুট, জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, এউইন মরগান। উইকেট শিকারিদের মধ্যেও আছেন জফরা আর্চার ১৭, মার্ক উড ১৬ এবং ক্রিস ওকস ১০।
সব মিলিয়ে বলা যায় এবারের ইংল্যান্ড দলটি মোর ব্যালেন্সড একটি দল।
তাই আমার ধারণা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সেমি ফাইনাল ম্যাচটিতেও হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।
বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী।
শেষ পর্যন্ত কে জিতবে জানি না, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার সমর্থন ও সহানুভূতি থাকবে ইংল্যান্ডের প্রতি।