'ব্রাজিলকে শিরোপা জেতাতেই এ দুর্নীতি' - মেসির বিস্ফোরণ
কোপা আমেরিকায় কাল তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বিতর্কিত লাল কার্ড দেখেন লিওনেল মেসি। এতে ক্রোধে ফেটে পড়ে লাতিন আমেরিকান ফুটবল কর্তৃপক্ষকে ধুয়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা।
কার্ডের প্রসঙ্গ পরে দৃশ্যটাই তো অবিশ্বাস্য। ম্যাচের তখন ৩৭ মিনিট। চিলির বিপৎসীমার মধ্যে বল দখলের লড়াইয়ে গ্যারি মেডেলকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। সেটি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত, তখন পরিষ্কার বোঝা যায়নি। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় চিলি অধিনায়ক যা করলেন তা অবিশ্বাস্য, চোখ রগড়ে বারবার দেখতে হয়। পেছনে ঘুরেই তিনি শরীর দিয়ে গুঁতোতে শুরু করেন মেসিকে। হঠাৎ এ আক্রমণের পাল্টা জবাব দেননি মেসি। দুই হাত তুলে চিলি অধিনায়কের প্রতিটি গুঁতোয় পিছিয়েছেন দু-এক পা করে। এর মধ্যে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন রেফারি মারিও ডিয়াজ দে ভিভার। ছুটে এসে সরাসরি লাল কার্ড দেখালেন দুজনকেই!
পরের দৃশ্যটা আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা ভুলে যেতে চাইবেন। অনেক প্রত্যাশা নিয়েও কোপা আমেরিকার সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ার দুঃখ তো আছেই। সঙ্গে যোগ করুন মেসির বিতর্কিত এ লাল কার্ড। যেখানে ভিডিও রিপ্লেতে দেখা গেছে, লাল কার্ড পাওয়ার মতো অপরাধ করেননি আর্জেন্টাইন তারকা। বড়জোর হলুদ কার্ড দেখানো যেত। কিন্তু রেফারি কী ভেবেছিলেন কে জানে! ৩২ বছর বয়সী মেসি পরের কোপা আমেরিকায় খেলবেন কি না, তা তোলা রইল সময়ের হাতে। আপাতত এটুকু বলা যায়, রেফারির কারণে কোপায় মেসির সবশেষ স্মৃতিটা হয়ে রইল বিতর্কিত, বিষাদমাখা প্রস্থান। লঘু পাপে গুরু দণ্ড পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে কিংবদন্তিকে।
বিতর্কিত এ লাল কার্ডে যথারীতি ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মেসি নিজেও চুপ করে থাকেননি। বরং এভাবে বলা যায়, লাল কার্ড দেখার মতো অপরাধ না করেও লাল কার্ড দেখার পর মেসি যেন অন্য মানুষ! এর আগে বহুবার রেগেছেন, ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন কিন্তু সেই রাগ দিয়ে কথার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন খুব কমই। কিন্তু কাল আর আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের সহ্য হয়নি। চিলিকে ২-১ গোলে হারিয়ে আর্জেন্টিনা তৃতীয় স্থান নিশ্চিতের পর পদক নিতে মঞ্চে যাননি মেসি। সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘পদক নিতে যাইনি। কারণ আমাদের অসম্মান ও দুর্নীতির অংশ হওয়া উচিত নয়।’
এখানেই শেষ নয়। কোপা আমেরিকার আয়োজক দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল ফেডারেশনকে (কনমেবল) ধুয়ে দিয়েছেন মেসি। এর আগে মাঠের রেফারির সঙ্গে তাঁর বচসা হয়েছিল সেমিফাইনালে। মেসি মনে করেন, ওই ঘটনার জের ধরেই কালকের (বাংলাদেশ সময়) লাল কার্ড। আর কনমেবল এবার কোপা আমেরিকার শিরোপা ব্রাজিলের হাতে তুলে দিতে যে সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করছে সে কথাও বলেছেন মেসি, ‘কোনো সন্দেহ নেই সবকিছু ব্রাজিলের পক্ষে পাতানো। আশা করি ফাইনালে ভিএআর ও রেফারি কোনো ভূমিকা রাখতে পারবেন না, পেরু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। যদিও আমার কাছে সেটি কঠিন মনে হচ্ছে। আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের ফাইনালে যেতে দেওয়া হয়নি। দুর্নীতি ও রেফারি মানুষের ফুটবল উপভোগের পথে বাধাসরূপ। আমাদের দুজনের জন্য হলুদ কার্ডই যথেষ্ট হতো। কিন্তু সেমিফাইনালের পর যা বলেছি এটি সম্ভবত তার ফল।’
সেমিতে ব্রাজিলের কাছে হারে আর্জেন্টিনা। এ ম্যাচে রেফারির সমালোচনা করেন মেসি। পেনাল্টি না পাওয়ার আক্ষেপ ঝরেছে তাঁর কণ্ঠে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এ নিয়ে দ্বিতীয় লাল কার্ড দেখলেন মেসি। ২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ম্যাচে লাল কার্ড দেখেছিলেন পাঁচবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার। সংবাদমাধ্যম তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিল, সেমিতে সমালোচনার জন্যই লাল কার্ড পেয়েছেন বলে মনে করেন কি? মেসির জবাব, ‘হ্যাঁ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটাই। আপনি সৎ হতে পারবেন না। কীভাবে সব করা উচিত সেটাও বলতে পারবেন না। কিন্তু আমি সব সময় সত্য বলা ও সৎ হওয়ার জন্য শান্ত থাকতে পারি।’
লাল কার্ড দেখায় এমনিতেই নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবেন মেসি। সেটি মার্চে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে। তবে কনমবেলের বিপক্ষে এভাবে ফেটে পড়ার জন্য অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া নিয়ে কোনো ভাবনা নেই মেসির, ‘তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু সত্য বলতেই হবে। আমি শান্তভাবে মাথা উঁচু করেই মাঠ ছেড়েছি।’
মেসির এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন লাতিন আমেরিকান ফুটবল কর্তৃপক্ষ (কনমেবল)। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘ফুটবলে কখনো হারবেন কখনো জিতবেন। সম্মানের সঙ্গে ফল বুঝে নেওয়া ফেয়ার প্লের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি, যা রেফারির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও খাটে। কোপার বিশুদ্ধতায় প্রশ্ন তুলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা অসত্য, ভিত্তিহীন ও অগ্রহণযোগ্য। এটি টুর্নামেন্টের প্রতি সম্মান না থাকাকে প্রমাণ করে।’