বাংলাদেশকে ভালোবাসা জানালেন রশিদ খান!
>রশিদ খান-মুজিব উর রহমান—আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণের মূল ভরসা। এ দুজন কী ভাবছেন আজকের ম্যাচ নিয়ে?
প্রেসবক্সে কাল সকালে ঢুকতেই দেখা মুজিব উর রহমানের সঙ্গে। কাজ শেষে বিকেলে বেরোনোর সময় সামনে পড়লেন রশিদ খান। ভাবছেন প্রেসবক্সের সঙ্গে দুই আফগান স্পিনারের যোগ কোথায়?
সাউদাম্পটনের স্টেডিয়ামকে কেউ ডাকেন রোজ বোল বলে, কেউ আবার বলেন হ্যাম্পশায়ার বোল। ২০০১ থেকে অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামটি ব্যবহৃত হচ্ছে হ্যাম্পশায়ার ক্রিকেট কাউন্টি দলের ঘরের মাঠ হিসেবে। স্টেডিয়ামটা শুধুই মাঠ আর গ্যালারিসর্বস্ব নয়; এটির সঙ্গে যুক্ত আছে একটা পাঁচ তারকা হোটেলও। স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সটা পড়েছে একেবারে হোটেলের পেটে। হোটেলের লবি পেরিয়ে লিফট ধরে তবেই আসতে হয় প্রেসবক্সে। একেবারে স্টেডিয়াম-লাগোয়া হোটেল হিলটনে আছে আফগানিস্তান। আফগান ক্রিকেটারদের রুম থেকেই দেখা যায় মাঠ, পিচ, গ্যালারি—স্টেডিয়ামের প্রায় সবকিছুই। কাল আফগানিস্তান কোনো অনুশীলন করেনি। আফগান ক্রিকেটাররা দিনটা কাটিয়েছেন ছুটির মেজাজে।
বিকেলে প্রেসবক্স থেকে বেরোনোর সময় হঠাৎ ‘একটু হেল্প করবেন?’ বলে দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এক ভদ্রলোক। তিনি কোনো বিপদে-টিপদে পড়েননি। ‘সহায়তা’ বলতে তাঁকে একটা ছবি তুলে দিতে হবে। ভদ্রলোক একজন ট্যাক্সিচালক। তাঁর গাড়িতে করে রশিদ খান যেন কোথা থেকে হোটেলে ফিরলেন। প্রিয় তারকার কাছে কোনো ভাড়া নিলেন না, তাঁর চাওয়া শুধু একটা ছবি। রশিদ ট্যাক্সিচালকের আবদার মেটালেন হাসিমুখে। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর এ হাসি থাকবে তো?
বাংলাদেশের দর্শকেরা অবশ্য মনেপ্রাণে চাইছে রশিদের হাসিটা কেড়ে নিন সাকিব-তামিম-মুশফিকরা। নানা কারণে আফগানিস্তানের এই লেগ স্পিনার বাংলাদেশে খুবটা একটা নন্দিত নন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ডের কাছে যেদিন বেধড়ক পিটুনি খেলেন, বাংলাদেশের দর্শকেরা কতভাবে যে তাঁকে ব্যঙ্গ করল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে! ‘এই ম্যাচে মাশরাফিরা আপনার হাসি কেড়ে নিতে চাইবেন, রশিদ’—কথাটা শুনে মুচকি হাসলেন এবং যা বললেন, তাতে বেশ চমকেই যেতে হলো! পরিষ্কার বাংলায় বললেন, ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ!’ কিন্তু তাঁর এই ভালোবাসা কি আর বাংলাদেশের বিপক্ষে থাকবে? এবার রশিদের উত্তর, ‘রোজ রোজ ভালোবাসা!’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) নিয়মিত খেলেন। বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটার, কোচ, সংগঠকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব ভালো। দু-একটা বাংলা ভাষা হয়তো তাঁদের কাছ থেকেই শেখা। আগামী বিপিএলেও তিনি খেলবেন, জানিয়ে রাখলেন। অবশ্য বিপিএলের আগেই আফগানিস্তানের হয়ে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা আছে তাঁর।
আলাপচারিতার মধ্যেই অটোগ্রাফ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এক বাংলাদেশি সাংবাদিক তাঁর হাতে একটা বল দিলেন। কিন্তু কলমের কালি ঠিক ঠিক বের হচ্ছিল না। আরেকটি কলমের খোঁজ যখন করা হচ্ছে, রশিদ কয়েকবার গ্রিপ ধরলেন, যেন হোটেল লবিতেই বোলিং শুরু করে দেবেন! ‘ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা আমাদের জেতা ছিল’—পরশু ভারতকে এত কাছে পেয়ে হারাতে না পারার আফসোস যাচ্ছে না রশিদের। সেদিন অবশ্য উইকেট থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন। শোনা যাচ্ছে, আজও একই উইকেটে খেলা হবে। পার্থক্যটা হচ্ছে, সেদিন ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল, কাল থেকে আবহাওয়ার চেহারা গেছে বদলে। সূর্য চলে গেছে মেঘের আড়ালে। মেট অফিসের পূর্বাভাস বলছে, আজও সেটি বজায় থাকার সম্ভাবনা।
আবহাওয়া এমন থাকলে কি স্পিন-জাদু দেখা যাবে? ‘ডব্লিউ-ডব্লিউ প্রবাদ শোনেননি! ইংলিশ ওয়েদারের কোনো নিশ্চয়তা আছে? স্বাভাবিক থাকুন, উপভোগ করুন, আরাম করে একটা ঘুম দিন, এটাই আমার ভাবনা’—বোঝা গেল রশিদ আবহাওয়া নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। তবে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে চিন্তা থাকার কথা। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আফগানদের জন্যও তিনি নিশ্চয়ই বড় হুমকি। আচ্ছা, কে বেশি ভয়ংকর—সাকিব আল হাসান, না রশিদ খান? গুগলিটা দারুণভাবে সামলালেন আফগান লেগ স্পিনার, ‘আমরা দুজন দুই ধরনের ক্রিকেটার। দুজনের খেলার ধরনও তাই দুই রকম।’
তবে রশিদের সঙ্গে তাঁর সতীর্থ মুজিবের অনেক মিল আছে—দুজনই কবজির স্পিনার। মন্থর উইকেট কাজে লাগিয়ে দুজনই ভারতের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করেছেন। সেদিন রশিদের চেয়ে তুলনামূলক বেশি সফল ছিলেন মুজিব। দ্রুত ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মাকে ফিরিয়েছেন। ৬০ বলের ৩৮টাই ডট, ১০ ওভারে ২৬ রান দিয়ে পেয়েছেন ১ উইকেট। দল হারলেও তাঁর যে কাজ, সেটি ভালোভাবে করেছেন। কাল সকালে হোটেল হিলটনের লবিতে দাঁড়িয়ে মুজিব জানিয়ে রাখলেন, এ ছন্দটা তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষেও ধরে রাখতে চান, ‘ম্যাচটা অসাধারণ ছিল। দুর্ভাগ্য আমাদের, শেষ পর্যন্ত হেরে গেছি। তবে এই উইকেটে স্পিনারদের অনেক হেল্প ছিল। বল ঘুরেছে, থেমে এসেছে। ইংল্যান্ডের অন্য মাঠগুলোর মতো উইকেট নয়। শুনছি বাংলাদেশের বিপক্ষেও একই উইকেটে খেলা হবে। চেষ্টা করব ছন্দটা ধরে রাখতে।’
মুজিবের কথায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রতি একটা হুমকিও যেন থাকল। এই মুজিব-রশিদ খান গত বছর জুনে দেরাদুনে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। লাল-সবুজ সমর্থকেরা প্রার্থনা করছেন, আজ যেন সেটার পুনরাবৃত্তি না হয়!